এইটি মূলত পূর্ববঙ্গীয়দের একটি ব্রত অনুষ্ঠান। কোথাও কোথাও এটি 'গারুসংক্রান্তির ব্রত' নামেও লোকমুখে পরিচিত।
আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে এই ব্রত পালন করা হয়। এক সময় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই ব্রত পালন করত। এই ব্রত পালনের মাধ্যমে হেমন্তকে স্বাগত জানানো হয়।
গ্রাম বাংলার মেয়ে ও বউরা কৃষিকাজে উন্নতি ও বিভিন্ন রকমের রোগ ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ ও সুস্থতা কামনায় এই ব্রতের প্রচলন হয়ে আসছে। এই ব্রত শুরু হয় আশ্বিন সংক্রান্তি আগের দিন অপরাহ্ন থেকে। এই ব্রতের প্রধান উদ্দেশ্য হেমন্তের অফলা রুক্ষ্মতাকে কাটিয়ে উঠে মা লক্ষ্মীর আহ্বান করা এবং তার সাথে মশা-মাছি, কীটপতঙ্গের হাত থেকে পরিবারকে রক্ষা করা।
হৈমন্তিক ধানের শীষে দুধ সঞ্চয়নমূলক একটি অনুষ্ঠান যার নাম হল 'গাস্বী' বা 'গারসি' ব্রত। গ্রামের মেয়ে-বউরা ব্রত পড়ে একসাথে গেয়ে বলে-
বুরা গিয়া ভালা আ
অলক্ষ্মীকে তাড়াইয়া লক্ষ্মী আ।
যা যা মশা মাছি উইড়া যা
আমাগো বাড়িত্যে অমুকের বাড়ি যা।
বাড়ির সমস্ত কিছু ধুয়ে-মুছে উঠোন গোবর দ্বারা নিকিয়ে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে হলুদ নিমপাতা বেটে একটা বাটিতে তুলসী তলায় সরষের তেল সহযোগে সারা রাতের জন্য আলগা অবস্থায় রাখা হয় যাতে হেমন্তের শিশির তাতে মিশে যায়। আম্র পল্লবসহ জলভরা ঘট তুলসী তলায় রেখে ধূপ দ্বীপ প্রদান করে সেই ঘটের জলে সামান্য সরষে তেল দেওয়া হয়।
আশ্বিন সংক্রান্তি তে কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠে পাটকাঠির গুচ্ছে আগুন দেওয়া হয় আর বলা হয়-
"আশ্বিন যায় কার্তিক আসে
মা লক্ষ্মী ঘরে আসে"।
এরপর আগের দিনের বেটে রাখা নিম পাতা হলুদ মেখে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে তুলসী তলার ঘটের জল সামান্য নিয়ে মুখে মাখতে হবে। এরপর শুরু হবে রান্নাবান্না। খেসারির ডাল হবে প্রধান পদ। তবেই এই ডালে থাকবে বিভিন্ন সবজি আর অবশ্যই দিতে হবে শালুক বা শাপলা, মেটে আলু, কচু ও থোড়। এর সাথে থাকে বিভিন্ন নিরামিষ তরকারি, ভাজা ও কচুর শাক, সবই নিরামিষ। কিছুটা ডাল পরের দিন আবার খাওয়ার জন্য তুলে রাখা হয় -
"আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়
যা বর মাঙ্গে সেই বর পায়।"
এর পর খাওয়া হবে তালের শাঁস।
এই দিন সন্ধ্যা বেলা থেকে উঠানের এক কোণে কোনো উঁচু গাছে পূর্ব পুরুষের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় "আকাশ প্রদীপ"। এই প্রদীপ কার্তিক পূজার দিন পর্যন্ত একমাস ধরে জ্বালানো হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.