"ব্রহ্মকমল" কি? - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০

"ব্রহ্মকমল" কি?

স্বয়ং ব্রহ্মার হাতের এই ফুল পৌরাণিক মতে, হাতির মাথা লাগানোর পরে গণেশের প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রহ্মকমলের জলে স্নান করে। যে কারণে, এই ফুলকে ‘জীবনদায়ী’ পদ্মও বলা হয়। তবে শুধু "পৌরাণিক" মতে গনেশের নয় বর্তমান যুগেও এটি একটি জীবনদায়ী ফুলই বটে।

What is Brahmakamal, mythical.

ব্রহ্মকমল একটি দিব্যফুল যা দেবতাদের প্রিয় ফুল। এটি সুন্দর, সুগন্ধীযুক্ত দিব্যফুল। এই ফুল মে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফোটে। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে এর ফোটা শুরু হয় এবং রাত ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে ফোটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। পরদিন সকালে এই ফুল ঝড়ে পড়ে। শোনা যায়, এই ফুল রাতে ফোঁটে এবং ভোর হওয়ার আগেই ঝরে যায়। তাই এর আর এক নাম ‘কুইন অব দি নাইট’


শাস্ত্রে এর ৬১ টি প্রজাতির কথা উল্লেখ রয়েছে। এটি প্রধানত হিমালয়ের ফুল। সিকিম উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশ এইফুল পাওয়া যায়।

আরোও পড়ুন: 'গারসি' বা 'গাস্বী' ব্রত কী? কখন এই ব্রত পালন করা হয়?

এটি জগতের সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মাজীর ফুল, তাই এটির নাম ব্রহ্মকমল। শিব, মা নন্দা দেবীর ও এ ফুল খুব প্রিয়। এই ফুল ফোটা দেখলে নাকি মানুষের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। এই ফুলকে নিয়ে বহু পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে।

সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয় এই ব্রহ্মফুলকে। সকালে শুকিয়ে যাওয়া ফুলটাকে নিয়ে অনেকে ঘরে ঢোকার দরজায় টাঙিয়ে রাখে। মানুষের বিশ্বাস এতে কোন নেগেটিভ এনার্জি ঘরে ঢুকতে পারে না। এছাড়াও এর অনেক ঔষধি গুণ ও রয়েছে।

ব্রহ্মকমলের নাম এক এক জায়গায় এক এক রকম। কাশ্মীরে 'গলগল', হিমাচল প্রদেশে 'দুধফুল', উত্তরাখণ্ডে 'ব্রহ্মকমল'। হিমাচলে 'দুলহাম্বুল'। শ্রীলঙ্কাতে 'কাদুফুল' এবং জাপানে একে বলে 'গীকা ভীষণ'।

আরোও পড়ুন: দামোদর মাস বা কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য।

উত্তরাখণ্ড গেলেই চোখে পরবে এই ফুল, মূলত রূপকুণ্ডের পথেই দর্শন পাওয়া যায় এই দুর্লভ ফুলের। অনেক দুষ্প্রাপ্য ফুলের মধ্যে এটি এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ যাদের মূল আবাস হিমালয় পার্বত্য এলাকা, ভারতের উত্তরাখণ্ড, মায়ানমারের উত্তরাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন। হিমালয়ের ৪৫০০ মিটার উর্দ্ধে দেখা যায় উত্তরখন্ডের এই 'রাষ্ট্রীয় ফুল'। ব্রহ্মকমলের আর দুটো নাম হল 'কন', 'কাপ্ফু'।

আগে পাহাড়ি অঞ্চল জুড়ে এই ফুল দেখা দিলেও এখন তা বিলুপ্তের পথে। আঞ্চলিক মন্দিরগুলোয় পূজোর জন্য প্রভূত পরিমাণে ব্যবহৃত হয় এই ফুল। তা ছাড়াও ব্রহ্মকমলের ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে যার ফলে প্রচুর পরিমাণে তা বিক্রি হয় কালো বাজারে।

তিব্বতে এই উদ্ভিদ ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা তিব্বতীয় ভাষায় "সা-দু-গোহ-ঘুহ" নামে পরিচিত। নানান ভেষজ ঔষধ ও মুত্র-সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এই ফুল।

তাছাড়া প্রতি নিয়ত পৃথিবীর আবহাওয়া বদলের ফলেও কমে যাচ্ছে এ ফুলের সংখ্যা। মানুষ নিজের স্বার্থে ধ্বংস করেই যাচ্ছে এই দুষ্প্রাপ্য ফুল। কেদারনাথ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি, নন্দাদেবী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও অ্যসকট ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি— কেবলমাত্র এই তিন অভয়ারণ্য বর্তমানে ব্রহ্মকমলের জন্য আজ একটি সংরক্ষিত স্থান।

পরিশেষে বলা যায় ভ্রমণ প্রিয় মানুষরা যারা এই অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন তারা যদি পাহাড়ি পথে ঘাটে এই ফুল দেখে তারা যদি এর ছবি তোলা পর্যন্তই সীমিত থাকেন, তুলে নষ্ট না করেন তাহলে এটিকে বিলুপ্তপ্রায় ফুল হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad