আদালতের রায়ের পর আতঙ্কের পরিবেশ তৃণমূলের অন্দরে। হেমতাবাদ, করণদিঘির তৃণমূল নেতাদের ফোন বন্ধ, তাঁরা বাড়িতেও নেই।
চার বছর আগেই আপার প্রাইমারিতে চাকরির জন্যে বামনগ্রাম, আটকড়া, কেশবপুরের শতাধিক যুবক জমি বিক্রি করে টাকা দিয়ে রেখেছিলেন। ভােটের আগেই শিক্ষকতার চাকরি হবে, সেই আশায় দিন গুনছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজ্য সরকারের গালে আবার বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। আপার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়ােগের প্যানেল ও মেধা তালিকা সম্পূর্ণ বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট।
এই খবরের পরেই কেশবপুরের কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী এলাকার তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়েও দেখা পেলেন না। হতাশ হয়ে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন ওই নেতাকে। চাকরি তাে আর হবে না, অন্তত জমি বিক্রির টাকাটা ফেরতের আশায় ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল নেতার বাড়ি।
সিপিআই (এম) করণদিঘি এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশিস ঘােষ অভিযােগ করে বলেন, সব আদরের আত্মীয়স্বজন, মাতাল, অযােগ্যদের কাছ থেকে তৃণমূল নেতারা আপার প্রাইমারিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে রেখেছে। চাকরিপ্রার্থীরা এখন হন্যে হয়ে ঘুরছেন। চাকরি দিতে না পারলে অন্তত সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দিতেই হবে।
আদালতের রায়ের পর এখন আতঙ্কের পরিবেশ তৃণমূলের অন্দরে। হেমতাবাদের বাঙ্গালবাড়ি এলাকায় একই পরিবারের শ্যালক, জামাইবাবু এবং তাঁর ভাইয়ের জন্য ৪১ লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছেন দুজন চাকরি প্রার্থী। প্রায় বছর দুয়েক হয়ে গিয়েছে, জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন।
শুক্রবার আদালতের রায় শােনার পর টাকা ফেরতের জন্য শ্যালক, জামাইবাবু তৃণমূল নেতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এলাকার বাসিন্দা মাজেদুর রহমান জানান, চাকরি না হয় না হােক, তবে টাকা অন্তত ফেরত দিলে সাধারণ মানুষ বাঁচবেন।
এক ব্যক্তি তাঁর ছেলে, মেয়ে, জামাইয়ের জন্যে আগাম ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতাকে। তিনি হাইকোর্টের রায় শুনেই খোঁজ শুরু করেছেন সেই তৃণমূল নেতার। খোঁজ করেও নেতাকে না পেয়ে যথেষ্ট হতাশ। বিন্দোল, কয়লাডাঙ্গি, মসলন্দপুরের যুবকরা অনেকেই আপার প্রাইমারির চাকরির জন্যে আগাম লক্ষ লক্ষ টাকা
দিয়ে রেখেছেন।
বিন্দোলের কৃষক ভুপেন বর্মণ প্রথম শুনলেন, আপার প্রাইমারি চাকরির দফা শেষ। শতাধিক যুবক আগাম টাকা দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা, ভােটের আগে চাকরি না হােক, অন্তত টাকাটা ফেরত দিক। জেলা বামফ্রন্ট নেতা অপুর্ব পাল জানান, এত দিন শােনা যাচ্ছিল, কিন্তু আদালতের রায়ের পর এখন অনেকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে টাকা ফেরত চাইছেন।
অনেকের কাছ থেকে ফোনে জানতে পারা যাচ্ছে, বহু বেকার যুবক আপার প্রাইমারিতে চাকরির জন্য আগাম টাকা দিয়ে রেখেছেন। দুয়ারে যখন সরকার, সেখানেই খোঁজ করলে নিশ্চয়ই হদিশ মিলবে। তৃণমূল নেতারা পালাবেন কোথায়? তিনি বলেন, বেকার যুবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে ফেরত দিতেই হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.