রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্তে BSF-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে।
শুরু থেকেই তৃণমূল (TMC)কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করে এসেছে।পাঞ্জাব এই সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করে ইতিমধ্যে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছে।
শুক্রবার রাজ্য বিধানসভাতেও এ নিয়ে প্রস্তাব আনল রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃনমূল। এ নিয়ে আলােচনা হবে আগামী ১৬ নভেম্বর।উপস্থিত থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।এ নিয়েই রাজনৈতিক তরজা চলেছে দিনভর।
কোচবিহারের সিতাইয়ে বিএসএফ (BSF)-এর গুলিতে প্রকাশ বর্মন নামে এক ভারতীয়সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন এই ঘটনার উল্লেখ করে প্রস্তাবের পক্ষে আলােচনার কথা জানিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “বিধানসভার ১৮৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী আমরা যে প্রস্তাব এনেছি তা গৃহীতও হয়েছে। BSF আইনে এভাবে এক্রিয়ার বৃদ্ধির কোনও সুযােগ নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিধানসভায় আলােচনা করা হবে। এর পরই একের পর এক মুখ খুলেছেন বিজেপির একাধিক নেতা।
শাসকদল এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিয়ে গােটা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর কথায়,“দেশের সুরক্ষার জন্য সীমান্তে কেবলমাত্র ৫০ কিলােমিটার নয় পুরাে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া উচিত।" এ নিয়ে বিজেপির বিধায়করা যা বলার বিধানসভায় বলবেন বলে সাফ জানিয়েছেন শুভেন্দু।
একইসঙ্গে তার বক্তব্য, “অনুপ্রবেশকারী ও গরু পাচার- কারীদের সঙ্গে যা করার দরকার তাই করেছে BSF"। রাজ্য সরকার নিজেদের স্বার্থেই BSF- এর বিরােধিতা করছে বলে জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘােষ (Diliop Ghosh)। তার কথায়, “বিএসএফ অনেক ধান্দাবাজি বন্ধ করে। সীমান্তে দুর্নীতি বন্ধ করে। তাই অনেকের গা জ্বালা করছে।"
আরেক নেতা রাহুল সিনহা (Rahul Sinha)-র প্রতিক্রিয়া, “রাজ্য সরকার এটা করতে পারে না।” এর মধ্যে এদিনই BSF-এর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। তা নিয়ে প্রবল 'উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্য রাজনীতি।
ঘটনায় BSF-এর দিকেই অভিযােগের আঙুল তুলেছেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁর দাবি,“মাথায় গুলি লেগে প্রকাশ বর্মনের মৃত্যু হল কেন? BSF-এর মদত ছাড়া সীমান্তে কোনও কিছুই পাচার করা সম্ভব নয়। কেন্দ্র অবিলম্বে বিএসএফ -কে নিয়ন্ত্রণ করুক,তা না হলে যে কোনও সমস্যা ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে।"
তার কথায়, “ছােট থেকেই বিএসএফের অত্যাচার দেখে আসছি। ওরা বরাবর সীমান্ত এলাকার মানুষের উপর নির্যাতন করে।" তিনি দাবি করেন বিএসএফদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ায় রফা হিসাব মনপসন্দ না হলেই এ জিনিস তারা ঘটায়।
বিএসএফকে আরও একবার নিশানা করে তিনি বলেন, “বিএসএফের মদতেই সীমান্তে চোরাচালান চলে।ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কারণেই মাঝেমধ্যে গুলি চালায় জওয়ান -রা। কোনও পরিস্থিতিতেই হত্যা করতে পারে না বিএসএফ।"
বিএসএফের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা নিয়ে আবার উদয়ন গুহ-র বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের বিরােধী দলনেতা। মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তিনি বলেছেন, “বিএসএফকে ছােট করা মানে দেশকে ছােট করা। ভারত সরকারের উচিত উদয়ন গুহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।"
যদিও এই ইস্যুতে তৃণমূলের সুরেই বিধানসভায় BSF-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্তাব আনার পক্ষে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। তিনি বলেছেন, “বিএসএফ নিয়ে বহু অভিযােগ আছে। সাধারণ মানুষ বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি অবিলম্বে বিধানসভায় এই বিষয়ক প্রস্তাব পাস করে কেন্দ্রকে পাঠানাে হােক।"
অন্যদিকে পরিষদীয় মন্ত্রীর কথায়, “বিরােধীরা কী করবে তা নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা আমাদের বক্তব্য নিয়ে আলােচনা করব।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.