কলকাতা : রাজ্যের স্কুলগুলিতে গত ১৮ নভেম্বর কর্মী নিয়ােগের দুর্নীতি নিয়ে আদালতে কোনও সদুত্তর দিতে পারল না স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)।
গত বৃহস্পতিবার SSC-র জমা দেওয়া হলফনামা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন মন্তব্য করেছেন এখানে সুস্পষ্ট করে কর্মী নিয়ােগের কোনও কথাই বলা নেই। তাই পুনরায় নতুন করে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে এদিন মধ্য শিক্ষা পর্ষদের কোর্টে বল ঠেলেছে কমিশন।অন্যদিকে পর্যদের তরফ থেকে আদালতকে জানানাে হয়েছে কমিশনের সুপারিশ মেনেই এই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিন হাইকোর্ট বলেছে, পর্ষদের কাছে কর্মী নিয়ােগের যে নথি রয়েছে তা যত্ন করে সংরক্ষিণ করে রাখতে হবে। এদিন মামলায় পর্ষদকে যুক্ত করে পর্ষদকেও আগামী সােমবার হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এদিন মামলাকারীরা জানিয়েছেন, ২৫ জনের যে তালিকা আদালতে জমা পড়েছে তার বাইরেও এমন বেআইনি নিয়োগের ৫০০ জনের তালিকা আছে। এই তালিকাও আদালতে জমা দেওয়া হবে।
আবেদনকারীদের এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এই ৫০০ জনের নাম ঠিকানা আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে বৃহস্পতিবার এই বেআইনি নিয়ােগ নিয়ে রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, শিক্ষামন্ত্রী বলেন "এটি ২০১৬ সালের ঘটনা, সেসময় আমি এই দপ্তরের মন্ত্রী ছিলাম না। তিনি আরোও বলেন, কোন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা ছিল তবে সেটা আমি জানি না।"
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন এটা কোনও একজন ব্যক্তির ব্যাপার নয়। গােটা বিষয়টি সরকারের ব্যাপার। কী হয়েছে দেখতে হবে। তিনি আরোও বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা। তারা কীভাবে কর্মী নিয়ােগ করেছে তার সবটা কমিশনই জানে।
বৃহস্পতিবার আদালতে SSC-র পক্ষ থেকে এই নিয়ােগের দায়ভার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ওপর চাপিয়ে বলা হয়েছে স্কুলে যে নিয়োগ হয়েছে তা সবটাই পর্ষদ করেছে। এই কথা বলার পরই ভরা এজলাসের মধ্যে কমিশনের আইনজীবী ও পর্ষদের আইনজীবীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়।
মধ্য শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে আদালতকে সাফ জানানাে হয়েছে কমিশন যে সমস্ত প্রার্থীর নাম নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পাঠিয়েছিল তাঁদেরই পর্যদ কাজ দিয়েছে। রাজ্যের স্কুল গুলিতে গ্রুপ-ডি পদে কর্মী নিয়ােগ হবে একথা জানিয়ে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ২০১৬ সালে। এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালে পরীক্ষা গ্রহণ করে এসএসসি (SSC)।
আবেদনকারীর আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জি বলেন, SSC জানিয়েছিল ৬ হাজার পদের জন্য কর্মী নিয়ােগ হবে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ১৩ হাজার কর্মী গ্রুপ-ডি পদে নিয়ােগ হয়েছে। ২০১৭ সালে যে প্যানেল SSC তৈরি করেছিল তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৯ সালে। দেখা যাচ্ছে এখনও ওই পদের জন্য শিক্ষাকর্মী নিয়ােগ অব্যাহত রয়েছে। এই গোটা বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মামলাকারীদের তরফে আদালতকে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালের পর পুরানাে প্যানেল থেকে যে নিয়ােগ হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ২৫ জনের নাম এই মামলায় দেওয়া হয়েছে। এখনও এই বেআইনিভাবে নিয়ােগের ৫০০ জনের তালিকা হাতে রয়েছে।
স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযােগ নিয়ে আদালতে মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন এই মামলার তদন্তের
দায়িত্ব সিবিআই (CBI)-র হাতে দেওয়া প্রয়ােজন। সেদিনই প্রয়ােজনীয় নথিপত্র নিয়ে কমিশনের সচিবকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
SSC বুধবার সে সমস্ত নথি নিয়ে বুধবার আদালতে হাজির হয়েছিল তা দেখে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণ করে বলেছিল কমিশনের সমস্ত কর্মী আটকে রেখে সিআইএসএফ (CISF) -কে নিয়ে কাগজপত্র উদ্ধার করতে হবে। বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন SSC একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
আদালত বৃহস্পতিবার SSC-র কাছ থেকে হলফনামা তলব করেছিল। এদিন যে হলফনামা SSC জমা দিয়েছে তা গ্রহণ-যােগ্য নয় বলে আদালত মনে করেছে। তবে এদিন এসএসসি এই বেআইনি নিয়ােগের দায় মধ্যশিক্ষা পদের বলে জানিয়েছে। আগামী সােমবার মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে রয়েছেন আইনজীবী
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, বিক্রম ব্যানার্জি, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.