খাদ্য আমাদের দিনযাপনের সঙ্গী। তার ভূমিকা সহায়ক, সদর্থক হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। বাঁচার জন্য খাচ্ছি, অথচ অজান্তে অতি-দ্রুতি ও অতি-আধুনিকতা আমাদের কুরে ফেলছে, টেরও পাচ্ছি না।
মানুষমাত্রই কমবেশি ছােটখাটো কিছু জিনিস অনেকেই ভুলে যান, কিন্তু ভুলে যাওয়ার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে, সেটা চিন্তার। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশও নয় তাে? ভয় হয়, আমাদের চারপাশে অ্যালঝাইমার্স কিংবা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।ডিমেনশিয়ার জন্য কিন্তু অনেক সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাসও দায়ী।
একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, কিছু কিছু খাবার মানুষের দেহের ভিতর উপস্থিত উপকারী গাট ব্যাকটিরিয়া বা অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়ার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরে ইনফ্ল্যামেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায় ও তা শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে মানুষের স্মৃতিশক্তির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।
জেনে নিন কোন ৫ রকমের খাবারে সবচেয়ে বেশি ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা:
১) অ্যালকোহল : রােজকার জীবনের স্ট্রেস কাটাতে অ্যালকোহলের ব্যবহার এখন মাত্রাতিরিক্ত। কিন্তু কথায় আছে, মদ সব ভুলিয়ে দেয়! অ্যালকোহল শরীরে গেলে যে হ্যাংওভার হয়, তার রেশ অনেকক্ষেত্রে পরের দিন অবধিও চলে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব খুবই ক্ষতিকারক। ২০১৮ সালে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে ১৪ বার মদ্যপান করেন যাঁরা, তাঁদের থেকে যাঁরা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকেন, সেইসব ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
২) নাইট্রেটযুক্ত খাবার: গবেষণায় দেখা গেছে, প্যাকেট-জাত প্রসেসড খাবার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের অনেকটাই ক্ষতি করছে। সাধারণত প্রিজারভেটিভ হিসাবে এবং স্যালামি, সসেজ, বেকন জাতীয় খাবারের মশলা ও রং ঠিক রাখতে নাইট্রেটের ব্যবহার হয়। এই ধরনের নাইট্রেটযুক্ত খাবার খেলে অবসাদ বাড়ে। সম্প্রতি আরও বিশদে জানা গেছে, এতে গাট ব্যাকটিরিয়ার আচরণের পরিবর্তন হয় এবং বাইপােলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
৩) তৈলাক্ত খাবার: খুব বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলেও স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা। পকোড়া, ভাজা চিকেন, ডােনাটসের মতাে খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। রিসার্চে জানা গেছে, এই ধরনের খাবার রক্তনালিতে ইনফ্ল্যামেশন ঘটায়। রক্তনালির মাধ্যমেই রক্ত মস্তিষ্কে সরবরাহ হয়। তাই যাঁরা খুব ভাজাভুজি খান, তাঁদের স্মৃতি দুর্বল হয়।এছাড়া বেশি তেলজাতীয় খাবার খেলে অবসাদ ও আসতে পারে।
৪) উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার: পাউরুটি, ময়দা থেকে তৈরি
পাস্তার মতাে পরিশােধিত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারই
হল উচ্চ গ্লাইসেমিক। এই ধরনের খাবার শরীরের ব্লাড শুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজনবৃদ্ধি, মেটাবলিজম সমস্যা, ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়ায়।
২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় জানা গেছে,যাঁরা আস্ত শস্যদানা, সবুজ সবজি, কাঁচা গাজরের মতাে কার্বোহাইড্রেট খান,তাঁদের অবসাদের সম্ভাবনা কম, স্মৃতিও ভাল থাকে।
৫) অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাদ্য: সাধারণত চিনি বা শুগার জাতীয় খাবার খেলে, শুগার গ্লুকোজে পরিণত হয়ে এনার্জি বাড়ায়, কিন্তু অতিরিক্ত শুগার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে স্মৃতিভ্রংশ ঘটায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসােসিয়েশনের চার্ট অনুযায়ী প্রতিদিন একজন পুরুষের ৩৬ গ্রাম ও মহিলার ২৫ গ্রামের বেশি শুগার খাওয়া উচিত নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.