সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি যদি পুষ্টি হয়, তবে তার প্রধান উপাদান হল প্রােটিন। যদিও ভারতীয়দের খাবারে প্রােটিনের মাত্রা সর্বদাই কম থাকে, তারা প্রােটিনের থেকে শস জাতীয় খাদ্যেই বেশি অভ্যস্ত। দেখা গিয়েছে, ভারতীয়-দের প্রায় ৫১% মানুষ অ্যানিমিয়ায় ভােগেন যার মধ্যে ৩৩.৪% মহিলা।
অ্যানিমিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ কিন্তু খাদ্যে প্রােটিনের অভাব। ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে, লাঞ্চ, ইভিনিং ন্যাকস ও ডিনার- এই প্রত্যেকটি খাবারের সময় প্রােটিনের একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বণ্টন থাকা উচিত।
প্রােটিন বণ্টন
ব্রেকফাস্টে প্রোটিন:
সারাদিনে বিভিন্ন খাবারের মধ্যে ব্রেকফাস্ট একদম ব্যালান্সড হওয়া উচিত। ব্রেকফাস্টে হাই বায়ােলজিক্যাল ভ্যালু যুক্ত প্রােটিন রাখতেই হবে যেমন ডিম, দুধ বা ছানা। কারণ, ব্রেকফাস্টে সঠিক প্রােটিনের উপস্থিতি
১. মাসল হেলথ ভাল রাখে, স্যাটাইটি হরমােনগুলির কার্যকারিতা বাড়ায়।
২. গুকোজ রেগুলেশন ভাল রাখে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪. হাঙ্গার রহমানের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত রাখে।
লাঞ্চে প্রােটিন:
আমাদের সারাদিনের ঠিক মাঝের খাবার হল লাঞ্চ, তাই দৈনিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষার ভার রয়েছে লাঞ্চের উপর।
যে কোনও একটি সিরিয়াল (cerial) সঙ্গে সবজি ও পর্যাপ্ত প্রােটিনের মাধ্যমেই সঠিক মিল তৈরি হয়।প্রােটিনের মধ্যে থাকতে পারে মাছ, যে কোনও মিট যেমন মুরগির মাংস, ডাল, টক দই ইত্যাদি। লাঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের উপস্থিতি ওভার ইটিং নিয়ন্ত্রণ করে।পেপটাইড YY নামক হরমােনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যা
দীর্ঘসময় পেট ভার রাখে। দিনের বাকি সময়ে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতাও কমায়।
ইভনিং স্ন্যাক্স :
সারাদিনের ব্যালান্সড ডায়েটের দফারফা করার জন্য ইভনিং স্ন্যান্স কিন্তু একাই যথেষ্ট। এই সময়ে একটু ভাজাভুজি খেতে ইচ্ছে করে অনেকেরই, সেই ক্রেভিং রােধ করতে পারে একমাত্র প্রােটিন। উৎস হিসাবে রাখুন স্পাউটস, সঙ্গে বিভিন্ন সিড (চিয়া, সানফ্লাওয়ার,পাম্পকিন
ইত্যাদি) সহযােগে স্যালাড। এতে পাবেন উপকারী ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, ও ফাইবার। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনাে অ্যাসিডের উপস্থিতি বােন মাস বৃদ্ধি করে, মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপােরােসিস-এর সম্ভাবনা কমায়।
রাতেও কি খাব প্রােটিন?
নিশ্চয়ই, রাতে ডিনারের পর পরের দিনের ব্রেকফাস্টে প্রায় ১০ ঘন্টা গ্যাপ থাকে। তাই রাতের খাবার অবশ্যই হবে ব্যালান্সড কিন্তু সহজপাচ্য। তাই কোনও আমিষ জাতীয় প্রোটিন রাতে না খাওয়াই ভাল, হাতে হজমের গােলমাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। উষ্ণ গরম দুধ রাতের প্রােটিনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস হওয়া উচিত। কারণ, এটি মস্তিষ্কে সেরােটোনিন-এর ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যা ভাল মানসিক স্বাস্থ্য ও ঘুমের জন্য খুব উপকারী, সঙ্গে মেশানাে যেতে পারে এক চিমটি হলুদ যা ইমিউনিটি বাড়াতেও খুব উপযােগী।
রাতে ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রােটিন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিন
ও HDL-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে,সর্বোপরি হার্ট ভাল রাখতে
খুব উপযােগী। এছাড়া মাঝরাতে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা থাকে অনেকের, ডিনারে পর্যাপ্ত প্রােটিন থাকলে সেই অভ্যাসও চলে যায় ধীরে ধীরে।
আমাদের দেশের বহু মানুষ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রােগে ভােগেন শুধুমাত্র ডায়েটে প্রােটিনের অভাবের জন্য। তাই প্রােটিন নিয়ে কোনও আপস নয়, পর্যাপ্ত ও সঠিক প্রােটিন আপনার বয়সকেও ধরে রাখবে বহুদিন। তবে যাদের কিডনির সমস্যা ও দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে, তারা প্রােটিন গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনুন, তবে তা অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়েই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.