স্মার্ট ফোন আর বিলাসিতা নয়। বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের পকেটেই ঢুকে পড়েছে অত্যাবশ্যক এই পণ্য।
কোভিড অতিমারীতে চলছে অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষা।
ছাত্রছাত্রীদের কাছেও এখন জরুরি সামগ্রী মােবাইল বা ট্যাব। প্রতি মুহুর্তের সঙ্গীর হঠাৎ শরীর খারাপ হলে পাগল পাগল দশা হয়ে যায় সকলের।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকলে তা খারাপ হবেই তার মেরামত-ও দরকার। মােবাইল সারাইয়ের দোকান বা নির্দিষ্ট সংস্থার সার্ভিস সেন্টারে বাড়ছে গ্রাহকের ভিড়। আর তাই ইনহাউস মােবাইল সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া।
প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোন বা ট্যাবের বিক্রয় কেন্দ্রে বা সংস্থার সার্ভিস সেন্টারে চাকরি পাচ্ছেন। নিজস্ব ব্যবসাও শুরু করছেন অনেকে। কম খরচে কোথায় শিখবে। বেসরকারি কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মােবাইল মেরামতি শেখানাে হয়।
এ রাজ্যের স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পে এই কাজ শিখতে ঋণের ব্যবস্থাও আছে। সবচেয়ে কম খরচে মােবাইল মেরামতি শেখা যায় রাজ্যের ভােকেশনাল কেন্দ্রগুলি -তে। ‘টেলিফোন অ্যান্ড মােবাইল সেট রিপেয়ারিং' নামের কোর্সটি আগে ছিল ছ'মাসের। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি হয়ে যাচ্ছে ন’মাসের। অষ্টম শ্রেণি পাস যে কেউ এই কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।বয়সসীমা ১৫ থেকে ৪০ বছর। ভর্তির সময় লাগে ১৮০ টাকা। পরে আর কোনও ফি লাগে না।
রাজ্যের ২,৮৬৪টি স্কুলে ‘অ্যাডভান্স ভােকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। মােবাইল মেরামতসহ ৪৪টি বৃত্তিমূলক কোর্স করা যায় এখানে।এই কেন্দ্রগুলি থেকে পাওয়া শংসাপত্র গােটা দেশে গ্রহণ করা হয়। জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নয়া শিক্ষাবর্ষ। আগামী বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ। পরে ভর্তি হতে চাইলে চোখ রাখতে হবে wbscvet.nic.in ওয়েবসাইটে।
কাজের অনেক সুযােগ
মােবাইল ব্যবহার যত বাড়ছে সমস্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।ব্যবহারজনিত বিভিন্ন কারণে অথবা অসাবধানতায় খারাপ হচ্ছে মােবাইল। কলকাতা-সহ জেলাগুলিতে হাজার হাজার মােবাইল সার্ভিস সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রতিটি সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১০০টি মােবাইল মেরামতের জন্য আসছে। সার্ভিস সেন্টারগুলাে মাসে খুব কম করে ১ লক্ষ টাকা আয় করে। কারিগরি শিক্ষা দফতরের সমীক্ষায় মােবাইল সার্ভিসিং। সেক্টরের বাজার এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার। আর তাই মােবাইল সার্ভিসিং একটি পৃথক শিল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মােবাইল সার্ভিসের এই বিশাল সেক্টরের যাত্রা শুরু হয় তারুণ্যের হাত ধরে। এই শিল্পে যাঁরা দক্ষ টেকনিশিয়ান হিসাবে কাজ করছেন তারা সবাই প্রশিক্ষিত।
প্রাতিষ্ঠানিক যােগ্যতার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা নিয়েই কাজে যােগ দিচ্ছেন হাজার ছাত্রছাত্রী। পরিচিত বিভিন্ন ব্র্যান্ড কোর্স শেষ হওয়ার আগেই ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে নিয়ােগপত্র তুলে দিচ্ছে তরুণ-তরুণীদের হাতে।
কোর্স করে কেউ বেকার নেই
শুরুতে টেকনিশিয়ানদের গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছে মােবাইল সংস্থাগুলি। অভিজ্ঞতা বাড়লে বাড়ছে বেতন। প্রবল চাহিদার কারণে এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে দ্রুত হারে। এই কারণে মােবাইল মেরামত শেখার তাগিদও বাড়ছে।
কারিগরি শিক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য বলছে কোর্স শেষ করার পর কেউ বেকার বসে থাকছেন না। কোথাও না কোথাও চাকরি মিলছে। পাশাপাশি নিজের ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। এই শিল্পের প্রসারে বিশ্বাসযােগ্যতাই মূল কথা।
নিখুঁতভাবে মােবাইলের সমস্যা জানিয়ে তা ফের ব্যবহারযােগ্য করে তােলার মাধ্যমে গ্রহণযােগ্যতা বাড়ে সার্ভিস সেন্টারের। ব্যাটারি, ব্লুটুথ, সফটওয়্যার ইনস্টলেশন, মেমােরি কার্ড ডাউন-লােড, মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ইনস্টলেশন, মােবাইল আনলক, ডেটা কেবল সমস্যা, হার্ডওয়্যার ক্যাপাসিটার, ডায়েড, ট্রান্সফ্রম, বিভিন্ন ধরনের সার্কিট ও সেগুলির কানেক-শন ডায়াগ্রাম, ডিসপ্লে কাজ না করা, সিকিউরিটি কোডসহ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করছে সার্ভিস সেন্টার। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে গড়ে ৪-১০ জন দক্ষ মােবাইল টেকনিশিয়ানের চাকরির সুযােগ রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.