হরিদাস রামদাস লাদ ছিলেন মহারাষ্ট্রের থানে অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী। অগাধ ধনসম্পদ তাঁর পরিবারের। দুই মেয়ে স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট আদরে প্রতিপালিত হবেন, তাতে আর আশ্চর্য কি! আবার ছােট মেয়ে সেবন্তী আরও একটু বেশিই প্রিয় তাঁর। এই মেয়েটাই মা-বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবেন, তা কি মেনে নিতে পারেন তাঁরা! মনে নিদারুণ আঘাত পেয়েছিলেন হরিদাস রামদাস। আদরের ছােট মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল তাঁকে।
কী করেছিলেন সেবন্তী?
দীননাথ মঙ্গেশকরকে বিয়ে করেছিলেন। না, সেটাই তাঁর একমাত্র অপরাধ নয়। অপরাধ হল, দীননাথ পাত্র হিসেবে
দোজবরে। সেবন্তীরই দিদি নর্মদার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে আগেই। দিদির (আর তাঁর শিশুকন্যা লতিকার) অকালমৃত্যুর পর তাঁর জামাইবাবুকে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন সেবন্তী।
তিরিশের দশকে রক্ষণশীল পরিবার আর সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ নিজের মতে জীবনটা বইয়ে নিয়ে যান তিনি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। সেই পথে তাঁর মা-বাবা কেউ পাশে নেই। ১৯২৭ সালে সেবন্তী আর দীননাথের বিয়ের দিন তাঁরা কেউ আসেননি। পরিবার পাশে না থাকলেও, স্বামী দীননাথের সঙ্গে মিলে জীবন ও জীবিকার লড়াইতে কখনও হারেননি সেবন্তী মঙ্গেশকর।তাঁর চার মেয়ে আর এক ছেলেকে (লতা, মীনা, আশা, উষা, হৃদয়নাথ) নিয়ে ভরভরন্ত সংসারের কাণ্ডারী তিনি নিজেই।
স্বামী দীননাথের দেওয়া নাম ‘সুধামতী'কে সার্থক করে তুলেছিলেন সেবন্তী। তাঁর সুধা যে কীভাবে গােটা পরিবারকে বিশ্বাসে, প্রেরণায়, শক্তিতে ভরপুর রেখেছিল, সে কথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন লতা মঙ্গেশকর স্বয়ং।
নাট্যকার, অভিনেতা, ধ্রুপদ শিল্পী দীননাথ মঙ্গেশকরের মৃত্যুর পর গােটা পরিবারের দায়ভার একার কাঁধে তিনি বহন করেছেন সুদীর্ঘকাল। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েদের মা আর বাবা একাধারে তিনিই।
লতা মঙ্গেশকর তাঁর মায়ের সম্পর্কে লিখেছেন, অভাব বা
দুর্দশা যতই থাক, কী করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা যায়, তা তাঁর মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, আজীবন তাঁর বেঁচে থাকার দর্শন এবং রসদ দুটিই তিনি পেয়েছেন তাঁর মায়ের থেকে। বাবার থেকে গান আর মায়ের থেকে মানসিক গঠন, এই দুইয়ের মিশেলেই লতা মঙ্গেশকর হয়ে উঠেছেন একটা গােটা দেশের কণ্ঠ’। এই ঋণ স্বীকারে তিনি দ্বিধাহীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.