কলকাতা : রাজ্যে স্কুলে শিক্ষক নিয়ােগে যে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। শুক্রবার এমন ভাষাতে কড়া মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
এদিন শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি (SSC)-র অস্বচ্ছতা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষক নিয়ােগে দুর্নীতির অভিযােগে সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ।
শুক্রবার বিচারপতি সৌমেন সেনের নেতৃত্বে গঠিত।ডিভিসন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর দুদিনের
স্থগিতাদেশ দিলেও কড়া ভাষায় এসএসসি-কে ভর্ৎসনা করেছে।
প্রসঙ্গত রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়ােগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা রয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চেও মামলার শুনানি চলছে। এদিন বিচরপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয়েছিলেন এসপি সিনহা।
রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়ােগের জন্য যে পাঁচ সদস্যের মনিটরিং টিম গঠন করেছিল, তার কনভেনর বা আহবায়ক ছিলেন এসপি সিনহা। অসুস্থতার কারণে তিনি দু’দিন আদালতে হাজির হননি। বিচারপতি তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। সেই নির্দেশের পরে শুক্রবার এসপি সিনহা নিজেই আদালতে উপস্থিত হয়ে তাঁর বক্তব্য বিচারপতিকে জানিয়েছেন।
বিচারপতি বেশ কিছু কাগজে সই দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন, এই সই তিনি করেছেন কি না। প্রথমে সিনহা জানান, এই সই তাঁর নয়। এরপর বিচারপতি তাকে সাদা কাগজে কয়েকটি সই করার নির্দেশ দেন। সেই কাগজে সই করার পরই বিচারপতি বলেন, ‘এখনও বলবেন এই সই আপনার নয়?” তখনই মনিটরিং টিমের কনভেনর স্বীকার করেন, কাগজের সই তাঁরই।
তিনি এদিন জানিয়েছেন, রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) কাছে তিনি একটি মাত্র কাগজ ফরওয়ার্ড করেছিলেন। এদিন তিনি আরও বলেছেন, নিয়ােগ সংক্রান্ত ব্যাপারে এই মনিটরিং টিম ছাড়াও ৩ সদস্যের একটি টিম ছিল সেখানে ছিলেন সমরজিৎ আচার্য, তপজ্যোতি বসু এক সমিত্রা সেনগুপ্ত।
এদিন প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আদালতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নিয়ােগের মনিটরিং টিমের কনভেনর এসপি সিনহা। এদিনই আদালতে শিক্ষক নিয়ােগের ক্ষেত্রে আরও অনিয়মের কথা উঠে আসে। বাংলার পর ইতিহাসের শিক্ষক নিয়ােগেও অস্বচ্ছতা ধরা পড়েছে। পরীক্ষায় না বসেই শিক্ষকতার চাকরিতে কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
গত ৩ মার্চ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই
তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, তদন্তকারী সংস্থার জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক জন আধিকারিকের নেতৃত্বে এই দুর্নীতি খুঁজে বের করতে হবে। রাজ্য সরকার টেটের পর শিক্ষক নিয়ােগের জন্য যে কমিটি গঠন করেছিল, তাঁদের সম্পর্কে ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপাের্ট আদালতে জমা দিতে হবে। আদালত বলেছিল, এই দুর্নীতির হাত কত দূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। মেধা তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছেন কাদের বদান্যতায়, সিবিআই-কে তা খুঁজে বের করতে হবে।
শুক্রবার বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিসন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের উপর দু’দিনের স্থগিতাদেশ দিয়ে মন্তব্য করেছে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি’র ভূমিকায় অস্বচ্ছতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলেই আদালত মনে করছে।
রাজ্যে ২০১৬-র টেটের পর ২০১৯ সালে রাজ্য সরকার একটি নিয়ােগ কমিটি তৈরি করে দেয়। এই নিয়োগ কমিটির হাতেই চাকরি দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল। সরকার যে নিয়ােগ কমিটি তৈরি করে, সেখানে শিক্ষা মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে দু’জনকে রাখা হয়েছিল। এক জন মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক এস আচার্য ও আরেক জন মন্ত্রীর ওএসডি পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কমিটিরই কনভেনর ছিলেন এসপি সিনহা। এই এসপি সিনহাই শুক্রবার আদালতে স্বীকার করেছেন, তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে তিনি নিয়ােগ সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠিয়েছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.