কলকাতা : মাত্র কয়েক বছরেই টাকা দ্বিগুণ করার টোপ। আবার কখনওবা মাসে ১৫ শতাংশ সুদের লোভও দেখানো হত। এতে মূল 'টার্গেট' ছিলেন প্রবীণরা। এই ফাঁদে পড়ে বৃদ্ধ বয়সের সঞ্চয় ভেঙে একেকজন বৃদ্ধ কয়েক কোটি টাকা করে লগ্নি করতেন। চিট ফান্ডের নাম করে দু'হাজার কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ। রাজ্য সরকারের ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্সের হাতে ধরা পড়লেন চিট ফান্ড কর্তা শান্তি সুরানা (Shanti Surana)।
শুক্রবার ভোররাতে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের একটি অভিজাত আবাসন থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে তিন দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
তবে পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে।
২০১৯ সালে শান্তি সুরানার বিরুদ্ধে তপসিয়া, ভবানীপুর–সহ কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানায় আটটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। টাকার পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। আবার এক আমানতকারী ১১ কোটি টাকাও লগ্নি করেছিলেন। আবার কলকাতার আশপাশ থেকেও একাধিক অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের হয়। এত অভিযোগ দেখে কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ মামলাগুলি ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্সের (DEO) হাতে তুলে দেয়। DEO তদন্ত করে জানতে পারে, এই রাজ্য সহ সারা দেশের অন্তত চারশো জন আমানতকারীকে প্রতারণা করেছে এই চিট ফান্ড সংস্থাটি।
সূত্রের খবর, চিটফান্ডের নামে আর্থিক প্রতারণায় শান্তি সুরানার প্রাথমিক টার্গেট ছিলেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বালিগঞ্জ-সহ কলকাতার বেশ
কয়েকটি ধনী এলাকার বয়স্কদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা তুলেছিলেন তিনি। রিয়েল এস্টেট-সহ নিজের ২০ টি সংস্থা আছে, এমনই জানিয়েছিলেন সবাইকে। তাঁকে ভরসা করে কেউ ২৫ লক্ষ টাকা, কেউ বা ১০ কোটি টাকা লগ্নি করেছিলেন। আশা ছিল, তা সুদে-আসলে ফেরত পাবেন। কিন্তু প্রতারিত হচ্ছেন, তা বোঝামাত্রই এক লগ্নিকারী তপসিয়া থানায় অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত।
উল্লেখ্য, আইন প্রয়োগ করে ডিইও চিট ফান্ড সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারে। গত বছর ইডি শান্তি সুরানা ও চিট ফান্ডের অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০০৭ সাল থেকে বালিগঞ্জের সুরানা পরিবার চিট ফান্ড সংস্থা তৈরি করে। অন্তত কুড়িটি বিভিন্ন ধরনের সংস্থাকে সামনে রাখা হয়েছিল। প্রথমে বলা হয়েছিল, সংস্থাটি তিনশো কোটি টাকা লগ্নি করছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ লগ্নি করা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট, ২৫ শতাংশ সোনা ও গয়না, ১৫ শতাংশ শেয়ার মার্কেট ও বাকিটা অন্যান্য খাতে। ২০১৮ সালে সংস্থার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.