সামসী : কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় গুলিবিদ্ধ মালদার দুই পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার সন্ধে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ওই রাজ্যের বাদগাম জেলার খান্দা নামে এক জায়গায়।
আহত দুই শ্রমিকের নাম আনিকুল ইসলাম (২৭) ও নাজেবুল আলম (১৯)। আনিকুলের বাড়ি চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া অঞ্চলের রহমতপুর গ্রামে। নাজেবুলের বাড়ি ওই ব্লকেরই জালালপুর পঞ্চায়েতের হজরতপুর গ্রামে। সম্পর্কে আনিকুলের শালা নাজেবুল। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে।
দুই পরিবারের লোকজনও চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে দুই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মালতীপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি।
দুই শ্রমিকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একমাস আগে আনিকুল ও নাজেবুল কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাদগাম জেলার খান্দা নামে এক জায়াগায় যান। সেখানে তাঁরা দিনমজুর হিসাবে আপেলের জমি পরিচর্যার কাজ করতেন। দৈনিক ৫০০ টাকার উপর পারিশ্রমিক পেতেন। বছরের অর্ধেক সময়ই তাঁরা কাশ্মীরে থাকতেন। শুক্রবার তাঁদের ছুটির দিন ছিল। তাই কাজে যাননি। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধেয় ইফতার করার পর দু'জনই নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরমধ্যেই গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। জঙ্গিরা তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁরা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির আওয়াজ থামলে বাড়ির মালিক ও স্থানীয়রা দু’জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে। তবে দু'জনেরই অবস্থা সংকট-জনক।
আনিকুলের বাবা মহসিন আলি পেশায় দিনমজুর। চার ভাই, তিন বোনের বড় পরিবার। পরিবারের সবার বড় আনিকুল। তিনি বিবাহিত। স্ত্রী মেরিনা বিবি। তাঁদের দুই নাবালক সন্তান রয়েছে। নাজেবুলের বাবা মহবুল হকও পেশায় দিনমজুর। তাঁরা দুই ভাই, দুই বোন। নাজমুলও পরিবারের বড়ো সন্তান। তিনি অবশ্য অবিবাহিত।
এলাকায় তেমন কাজ ছিল না। তাই কাশ্মীরে কাজে যান আনিকুল ও নাজেবুল। রাজ্য সরকারের কাছে দুই পরিবারের দাবি, আনিকুল ও নাজেবুলকে পশ্চিমবঙ্গে এনে এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
আনিকুলের স্ত্রী মেরিনা বিবি জানান, ‘গতকাল ইফতারের পর স্বামীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথা বলতে বলতেই ওপার থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসে, সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে যায়। আর কথা হয়নি। ও ফোনে জানিয়েছিল, তারা খুব ভালো আছে। ইদের জন্য বাড়িতে টাকাও পাঠাচ্ছে। সেই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়ের জন্য আমাকে জামাকাপড় কিনতে বলে। আমাকেও শাড়ি কিনতে বলে। মুহূর্তের মধ্যে এমনটা যে ঘটবে তা ভাবতেই পারছি না। আমি ওকে একবার দেখতে চাই।'
ঘটনার খবর পেয়ে এদিন বিকেলে রহমতপুর ও হজরতপুর গ্রামে দুই শ্রমিকের বাড়িতে ছুটে যান এলাকার বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি। দুই শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, 'জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে এনিয়ে কথা হয়েছে। জখম দুই শ্রমিককে যাতে দ্রুত এ’রাজ্যে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় তার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.