ভূত চতুদর্শী ও চৌদ্দ পুরুষের বাতি। ভূত চতুর্দশীর দিন চৌদ্দ  শাক খাওয়া ও চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর গুরুত্বপূর্ণ কেন। - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২

ভূত চতুদর্শী ও চৌদ্দ পুরুষের বাতি। ভূত চতুর্দশীর দিন চৌদ্দ  শাক খাওয়া ও চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর গুরুত্বপূর্ণ কেন।

Bhoot choturdarsi, Choddo sak


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আলোর উৎসব দীপাবলি হলো এক বিশেষ দিন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঐদিন মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্ৰ চৌদ্দ বছরের বনবাস
শেষে  অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করে ছিলেন। শ্রীরাম চন্দ্রকে স্বাগত জানাতে ঐদিন সারা অযোধ্যা সেজে উঠেছিল দীপের আলোয়। সেই তখন থেকেই শারদীয় দূর্গাপূজায় পরবর্তী অমাবস্যার দিন আলোর উৎসব দীপাবলি হিসেবে পালন করা হয়।


অনেকের মতে অন্ধকার হচ্ছে অশুভ আর অমঙ্গল তাই দীপাবলির দিন দীপ জ্বালিয়ে অশুভ-অমঙ্গল আর অলক্ষ্মীকে বিদায় জানানো হয়। সেই সঙ্গে দীপাবলির আগের দিন অর্থাৎ চতুর্দশী তিথিটি বাংলার ঘরে ঘরে ভূত চতুর্দশী হিসাবে পালন করা হয়। এদিন বাংলার ঘরে ঘরে মৃত পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে চৌদ্দ বাতি জ্বালানোর রীতি আছে। কোন কোন অঞ্চলে এদিনের দিনে চৌদ্দ শাক খেয়ে সন্ধ্যায় চৌদ্দো প্রদীপ
জ্বালানোর রীতি প্রচলিত রয়েছে।
Choddo sak

প্রাচীন কাল থেকে বাড়ির কর্তা প্রতি বছর বাড়িতে কার্তিক মাসের চতুর্দশী তিথিতে চৌদ্দ পুরুষের বাতি জ্বালিয়ে দেন। তাদের বিশ্বাস এদিন তাঁর মৃত পূর্ব পরুষেরা মর্ত্যে ফিরে আসেন। তাঁরা আসেন আমাদেরকে দেখতে আর আশীর্বাদ দিতে। তাই তাঁদের খুশি করতে আর পথের দিশা দেখাতে চৌদ্দ পুরুষের বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক একই বিশ্বাসে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে বাংলার প্রতি বাড়িতেই চৌদ্দ পুরুষের বাতি জ্বালানো হয়। লোক বিশ্বাস মতে এদিন মৃত পূর্ব পুরুষেরা মর্ত্যে নেমে আসেন। তাঁরা দেখতে আসেন তাদের পরিবারের লোকজন কেমন আছে। তাদের খুশি করতে তাদের পথ দেখাতে চৌদ্দ বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এই চৌদ্দ পুরুষ হলেন পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী। এ ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি।

কিছু কিছু মানুষের বিশ্বাস পিতৃপক্ষের সময় পিতৃপুরুষেরা তাঁদের সন্তানদের আশীর্বাদ দিতে মর্ত্যে ফিরে আসেন আর কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতেই শুরু হয় তাঁদের ফিরে যাওয়ার পালা। তাই এদিন তাঁদেরকে অন্ধকারে পথ দেখাতে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে পথ দেখানো হয়।

অন্য এক বিশ্বাস মতে এদিন বলি রাজার অনুচরগণ মর্ত্যে চলে আসে। তারা যাতে কারো ঘরে প্রবেশ করতে না পারে তাই তাদের পথ দেখাতে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। অনেকে এদিনকে যম চতুর্দশীও বলে থাকেন।কোথাও কোথাও এদিন চৌদ্দজন যমের তর্পণ করার প্রচলনও আছে।

অনেকে বিশ্বাস করেন এদিন দুপুরে চৌদ্দ শাক খেয়ে প্রদীপ জ্বালালে পূর্ব পুরুষ খুশী হন। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে এই চৌদ্দ শাক হলো - ওল, নটে, বেথুয়া, সরষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী, নিম, হেলেঞ্চা, সজনে, পলতা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুলফা ও শুষণী শাক। কিন্তু বর্তমানের বাজারে শাক-সবজির যে চড়া দাম চৌদ্দ শাখ খাওয়াটা এখন আর সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও খেতে তো হবেই, ভূতচতুর্দশী বলে কথা।

বর্তমানে এদিন যে সব শাক খাওয়া হয় তা হলো ওল, নটে,বেথুয়া,সর্ষে, কালকা সুন্দে, জয়ন্তী, নিম, হেলেঞ্চা, সজনে,পলতা,গুলঞ্চ, ভাঁটাপাতা, গুলফা ও শুষণী। দিনে চৌদ্দ শাক খেয়ে সন্ধ্যায় চৌদ্দ বাতি জ্বালাতে হয়। আর অশুভ আত্মাদের হাত থেকে বাঁচাতে জপ করা হয় "শীতলঞ্চ সমাযুক্ত সকণ্টক দলান্বিত। হরপাপ সপামার্গে ভ্রাম্যমাণঃ পুনঃ পুনঃ"। এই মন্ত্র। এভাবেই যুগ যুগ ধরে ভিন্ন রীতিতে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে চৌদ্দ পুরুষের বাতির জ্বালানোর রীতি চলে আসছে আর তা যুগ যুগ ধরে চলবেও তা নিঃসন্ধেহে বলা যেতেই পারে ৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad