ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (ISIS) জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অভিযোগে সদ্য কলকাতায় ধরা পড়েছে মহম্মদ সাদ্দাম এবং মহম্মদ সইদ নামে হাওড়ার দুই যুবক। তাদের জেরার পর মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা আবদুল রাকিব কুরেশিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুরেশিকে তোলা হলে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
সাদ্দামকে জেরা করেই পুলিশ কুরেশির খোঁজ পায়। সেই সূত্রে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের কর্মীরা মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া থেকে গ্রেফতার করেন কুরেশিকে। জানা গিয়েছে, ভারতে আইএস স্লিপার সেল' তৈরির ব্যাপারে সক্রিয় ছিল কুরেশি। যা চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের।
বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, সাদ্দামের মতো আইএস জঙ্গিদের মতাদর্শ প্রচার করত কুরেশি। দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শ প্রচারের কাজের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল সে। এভাবেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছিল কুরেশি।
পুলিশের দাবি, কলকাতায় ধৃতদের যে জঙ্গি মডিউল তৈরি হয়েছিল তাদের প্রযুক্তিগত সাহায্য দিত কুরেশি। এমনকী, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সাদ্দামদের জোগান দিত কুরেশি। কুরেশির কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন এবং ওয়ালেট পাওয়া গিয়েছে। কলকাতায় জঙ্গি সন্দেহে ধৃত সাদ্দামের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয় সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য পায় পুলিশ। সেই অনুযায়ী তদন্ত চালিয়ে কুরেশির খোঁজ মেলে। প্রসঙ্গত, সাদ্দামের কাছ থেকে যে ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল তাতে আরবি ভাষায় অনেক কিছু লেখা ছিল। যেমন, ‘আইএসের প্রতি আমার আনুগত্য বজায় থাকবে।' যা দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, আইএসের সঙ্গে সে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
পুলিশ সূত্রে খবর, একাধিক রাজ্যে নাশকতার ছক কষেছিল সাদ্দাম। আর সেই চক্রে সরাসরি চালাত মধ্যপ্রদেশের কুরেশি। পুলিশ সূত্রে খবর, একটা সময় নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র সক্রিয় সদস্য ছিল কুরেশি। জেহাদ নিয়ে সাদ্দাম ও সইদ একই ভাবধারায় বিশ্বাস করত। সেই কারণেই তাদের যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, কুরেশি অস্ত্র সরবরাহ ও তৈরির কথাও বলেছিল সাদ্দামদের। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের জিজ্ঞাস্য,কেরলের আইএস অনুগামীদের মতো সিরিয়া বা ইরাকে গিয়ে কুরেশি আইএস শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল কিনা। পুলিশের সন্দেহ, ঘরোয়া পদ্ধতিতে ড্রোন ও অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারে সাদ্দাম ও কুরেশি।অন্যদিকে, সাদ্দাম ও সইদকে জেরা করেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (NIA) গোয়েন্দারাও। STF এর দফতরে বসেই ধৃতদের সোমবার থেকে জেরা শুরু করেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, হাওড়ার ওই দুই যুবককে জঙ্গি সন্দেহে শুক্রবার পাকড়াও করে পুলিশ।
ধৃত দুই যুবক মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাদ্দাম মল্লিক ও সইদ আহমেদ জঙ্গি সংগঠন ISIS এর সঙ্গে যুক্ত বলে লালবাজারের গোয়েন্দারা আগেই খবর পান। এছাড়া ধৃতরা কোনও স্থানে হামলার ছকও কষেছিল বলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। সেই লক্ষ্যেই তারা অস্ত্র এবং টাকা জোগাড় করছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ধৃতদের কাছ থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ, মোবাইল, জেহাদি বই,নোটবুক ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু'বছর ধরে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে সাদ্দামের। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত সে। তার বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা পর্যন্ত ছিল। জানা গিয়েছে, সাদ্দাম এবং সৈয়দ— দু'জনেই বেশ মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। সাদ্দাম এম-টেক করছিল। অন্যদিকে, কোম্পানি সেক্রেটারিশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছিল সৈয়দ। এছাড়া সৈয়দ তার বাবার নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিল।তাদের বয়স ২৮-৩০ বছরের মধ্যে। তারা দু'জনেই বেশ ভালো বন্ধু বলে পরিচিত ছিল। একে-অপরের বাড়িতেও নিয়মিত যাতায়াত করত তারা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.