রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তুষ্টিকরণ ও বহিরাগত ইস্যুতে। সুর চড়িয়েছেন ভুয়ো ভোটার নিয়েও। তাঁর কথায় উঠে এসেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে তুলোধোনা করেছেন 'মিথ্যাচারে'র অভিযোগে। কথা বলেছেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়েও।সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিজেপি নির্বাচনী ইস্তেহারে সিএএ (CAA)-র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং মোদি কি গ্যারান্টি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।
সিএএ বাংলায় বসবাসরত বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিত হিন্দুদের সুরক্ষা প্রদান করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র তাঁর মুসলিম ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করতে সিএএ-র বিরোধিতা করছেন এটা করে তিনি রাজ্যকে তীব্র সাম্প্রদায়িক লাইনে বিভক্ত করছেন। পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বাস্তবায়নের অনুমতি না দেওয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে? তাঁর মন্তব্য ভারতের সংবিধান এবং সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ। 'অর্গানাইজার'-এ বঙ্গ বিজেপি সভাপতি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের ৩৫ টি আসনের লক্ষ্য দিয়েছেন। আমরাও ৩৫ টি আসন লক্ষ্য করেই এগোচ্ছি।' আর এই নির্বাচনে সন্দেশখালি ইস্যু বিজেপির পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে বলেই আশাবাদী সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন,'সন্দেশখালি নন্দীগ্রামের থেকেও বড়ো ঘটনা। এই ঘটনা নন্দীগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী। সন্দেশখালি তৃণমূলের কবরস্থান হিসাবে প্রমাণিত হবে। নন্দীগ্রামে ছিল জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু সন্দেশখালি মহিলাদের সম্মানের প্রশ্নে লড়াই।
তৃণমূলের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ শাহজাহান ও তার গুন্ডারা রাজ্যের নারীদের সম্মান ও মর্যাদাকে ধ্বংস করেছে। শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের পরও তার দুই ভাই এখনও সেখানে মহিলাদের হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনাটি রাজ্যের জনগণের কাছে তৃণমূলের চরিত্র উন্মোচিত করেছে। আগে তারা জানত, তৃণমূল দুর্নীতিতে জর্জরিত। এখন তাদের চরিত্রহীনতা স্পষ্ট সামনে এসেছে। আসলে শাহজাহান থেকে জাহাঙ্গির, এটা একটা বৃত্ত। যারা রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত এবং হিন্দু মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ ও জমি দখলের অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই বেশকিছু ছোট ছোট সন্দেশখালি রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় আছে শেখ শাহজাহান, দক্ষিণে আছে জাহাঙ্গির এমনকী, কয়েকদিন আগে তৃণমূলের গুন্ডাদের দ্বারা একটি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। আমি জোর দিয়ে বলছি, এরা শুধু তৃণমূলের গুন্ডা নয়, এরা জেহাদি! একদা এই শেখ শাহজাহান সিপিএম নেতা ছিল। তৃণমূলের আমলেই বাংলায় ল্যান্ড জেহাদ ও হিন্দু-বিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রীর বহিরাগতের তকমা দেওয়া নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বলেছেন, ‘এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা ভন্ডামি। প্রার্থী ঘোষণার ঠিক আগে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে আক্রমণ করেছিলেন বহিরাগতদের দল বলে। তারপর মাঠে নামলেন কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা এবং ইউসুফ পাঠান। এঁরা কি বাংলা বলতে পারেন? এঁরা কি বাঙালি?' রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সুকান্ত বলেন, 'তৃণমূল বাঙালির আবেগ -কে কাজে লাগাচ্ছে, আবার তারা ইউসুফ পাঠানের মতো একজন গুজরাটি মুসলমানকে তাদের তুষ্টিকরণের জন্য খুঁজে পেয়েছে। গুজরাটি ইউসুফ পাঠান বহিরাগত না হলে, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বহিরাগত কেন?”
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদানের পর তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া নিয়েও ওই সাক্ষাৎকার এ মন্তব্য করেছে সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, “আমরা বিচারপতি গঙ্গোপাধায়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করিনি যতক্ষণ না তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ও বিজেপি -তে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মজার বিষয় হল, হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে তিনি যে সমস্ত রায় দিয়েছেন, তা তৃণমূল সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে। জনগণের বিচারক হিসাবে তাঁর রেকর্ড অনবদ্য। বিচারপতি নুর আলম চৌধুরীও কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরে তৃণমূলে যোগ নিয়েছিলেন। তাহলে তৃণমূলের যুক্তি অনুসারে, বিচারপতি চৌধুরীর দেওয়া সমস্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা করা উচিত? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত আমাদের বিচার বিভাগকে সম্মান করতে শেখা।’
বাংলায় ভুয়ো ভোটার প্রসঙ্গেও সুকান্ত মজুমদার মুখ খুলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ইংরেজি মুখপত্রে তাঁর দাবি, ' আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি তালিকা জমা দিয়েছি, যেখানে ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় কমিশনের কঠোর হওয়া উচিত। কমিশনের উচিত যাতে জাল ভোট না হয়, তা নিশ্চিত করা।
বাংলার প্রাপ্য কেন্দ্র দিচ্ছে না। তৃণমূলের এই অভিযোগ 'মিথ্যা' বলে দাবি বঙ্গ বিজেপি সভাপতির। তিনি বলেছেন, 'এই মিথ্যার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনও তথ্য নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যখন ইউপিএ-র মন্ত্রী ছিলেন, তখন বাংলার জন্য ৩০০-৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হত। এখন মোদি সরকারের আমলে বাংলার রেল বাজেট ১২,০০০ কোটি টাকারও বেশি। একটা সময় বামফ্রন্ট এই মিথ্যা প্রচার করত। বামেরা বলত, কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই বাংলার জন্য চিন্তা করেনা এবং বাংলার অনুন্নয়নের জন্য একমাত্র দিল্লিই দায়ী। এভাবে তারা বাঙালিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জনগণকে জনগণের বিরুদ্ধে এবং এক ভাষার বিরুদ্ধে অন্য ভাষাকে প্রতিপক্ষ করে তোলে। তারা আমাদের জাতীয় সংহতি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেছে। মমতা একই মিথ্যাচারে পারদর্শী হয়েছেন, তিনি দিল্লি বনাম কলকাতা নিয়ে প্রতিটি ইস্যু তৈরি করছেন।
যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নি ঘোষ হিন্দুধর্মের অবমাননা করেছিলেন বলে দাবি সুকান্তর। এটা নির্বাচনী ইস্যু হবে বলে দাবি করেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেছেন, 'এটি একটি নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠবেই। হিন্দুরা এটি ভুলে যাননি। তাঁরা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। আমরা পাবলিক স্কোয়ারে টাঙানো ঘণ্টা নই, যা যে কেউ বাজাতে পারে। সময় এসেছে, আমাদের ধর্ম ও পবিত্র প্রতীককে অপমান করা বন্ধ করতে হবে। বাংলার মানুষ সায়নি ঘোষের মতো মানুষ এবং এবং তাঁর দলের বিরোধিতাই করবেন।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.