রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে এদিন রিপোর্ট তুলে দেন কোবিন্দ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিটির অন্যতম সদস্য কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পাশাপাশি অন্যান্যরা।
এক সপ্তাহের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে বলে একাধিক সূত্রে খবর। তার আগে 'এক দেশ এক ভোট' বিষয়টি নিয়ে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। যে রিপোর্ট এদিন তুলে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে তাতে ১৮ হাজার পাতা রয়েছে। রিপোর্ট।আটটি খণ্ডে বিভক্ত। জানা গিয়েছে, ২০২৯ সাল থেকে 'এক দেশ এক ভোট' নীতি কার্যকরের জন্য কয়েক দফা সুপারিশ করেছে এই কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদা ভাবে বিধানসভা, লোকসভা নির্বাচন হলে বারবার আদর্শ
আচরণবিধি ঘোষণার ফলে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ধাক্কা খায়। ফলে আর্থিক বৃদ্ধিও ধাক্কা খায়।
সূত্রের খবর,রিপোর্টে সুপারিশ হিসাবে বলা হয়েছে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট করানো যেতে পারে। ফলে একটি ভোটার তালিকাতেই সমস্ত কাজ হয়ে যাবে। তবে এই নীতি কার্যকর।করতে গেলে বহু রাজ্যেই নির্বাচিত সরকার তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে না। যেমন ধরা যাক পশ্চিমবঙ্গের কথা।
২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হবে।সেখানে যে দলই জিতে ক্ষমতায় আসুক না কেন, ২০২৯ সালে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করতে গেলে সেই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ তিন বছরের মাথাতেই নতুন করে নির্বাচন করাতে হবে সেখানে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে গেলে সংবিধান সংশোধন, করতে হবে কেন্দ্রকে।
গত বছর একটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘কয়েক মাস অন্তর কোথাও না কোথাও নির্বাচন হয়। এতে উন্নয়নের কাজে সমস্যা হয়। তাই এক দেশ এক নির্বাচন এই নীতি নিয়ে সবার ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে।' এরপরই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করে কেন্দ্র।
এখন প্রশ্ন, এই ব্যবস্থা চালু হলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া রিসার্চের রিপোর্ট বলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারগুলি মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেক্ষেত্রে একসঙ্গে নির্বাচন হলে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। বারবার নির্বাচন করাতে গেলে যে বিপুল খরচ হয়, তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন হলে যে আদর্শ আচরণবিধি প্রয়োগ করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন, তার জেরে থমকে যায় সরকারি প্রকল্পের কাজকর্ম। একসঙ্গে ভোট হলে বার বার আদর্শ আচরণবিধি চালু করতে হবে না। এছাড়া নির্বাচনগুলিতে সরকারি কর্মীদের ব্যবহার করা হয়। তাই একসঙ্গে নির্বাচন হলে বারবার তাঁদের ব্যবহার করতে হবে না। অর্থাৎ দেশজুড়ে সরকারি কাজ বারবার থমকে যাবে না।
ঘটনা হল, ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লোকসভা ও বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভার ভোট একসঙ্গেই হয়েছিল। তবে ১৯৬৭ সালের পর থেকে সেটা আর সম্ভব হয়নি। এতে এটাই স্পষ্ট অতীতে যা সম্ভব হয়েছিল, সেটা নতুন করে চালু করতে চায় নরেন্দ্র মোদি সরকার। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, একসঙ্গে নির্বাচন হলে বিজেপি বাড়তি সুবিধা পাবে। কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁদের বড়ো অংশের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। তাই বিরোধীরা যে 'এক দেশ এক ভোট' নীতির বিরোধিতা করবে, সেটা স্পষ্ট। তাই আগামী দিনে বিষয়টি কোনদিকে গড়ায়, সেটাই দেখার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.