রামনামে এবার মুখরিত বাংলার শাসকদলও। প্রথমবারের মতো মিলছে রামনবমীর সরকারি ছুটিও,বসে নেই বিজেপিও সরাসরি না হলেও প্রথম দফার ভোট থেকে হিন্দুত্বে শান দিতে তারা রামনবমীকে ব্যবহার করবেন তা বলাই বাহুল্য। সবমিলিয়ে এবারের লোকসভা ভোট রামনামের মধ্য দিয়ে সূচনা হতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত, এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অতীতেও বিজেপির প্রায় সব নেতা-কর্মীদেরই রামনবমীর মিছিলে, সভায় দেখা গিয়েছে।অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনটিকে রাজ্যের সর্বত্র পালন করতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের। রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন দলের নেতা দিলীপ ঘোষও। গতবছর থেকেই রীতিমতো ঘোষণা করে বলা হয়েছিল, বিজেপি কোনও কর্মসূচি করবে না। তবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে রাজ্যে এক হাজারের বেশি অনুষ্ঠান হবে এবং তাতে বিজেপির নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন। এবারও তারচেয়ে ব্যাপক ভাবে রামনবমী পালনে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে গেরুয়া বাহিনীর মধ্যে।
মন্দির উদ্বোধনের পরে রাজ্য থেকে ট্রেনে করে কর্মী-সমর্থক -দের অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগে শামিল হয়েছে বিজেপিও। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তবে ভোটের একেবারে মুখে মুখে রাম নামে আরও জোর দেওয়ার পরিকল্পনা। আর একে কাউন্টার করতে গিয়ে রামনবমীর ছুটি ঘোষণা করছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেলানোর কোনও চেষ্টাই নেই দলের। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশ তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপিকে রুখতে রামনামের স্মরণে এবার তৃণমূলও।
বিজেপি নয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবছরও পালিত হবে রামনবমী প্রতিবারের মতো যাতে অংশ নেবেন বিজেপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এই কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, 'আমাদের যে কর্মসূচি, তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমরা ভগবান রামকে পুরুষোত্তম মনে করি। তাঁর আদর্শের কথা বলি। আমরা রামরাজত্ব মানে সব দিক থেকে উন্নত ভারতের কথা ভাবি। এটাও মনে করি যে, রামের পুজোয় সব ধর্মের ভারতীয়ের অংশ নেওয়া উচিত। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশেই গ্রামে গ্রামে পরিষদ রামনবমী পালন করবে।
অযোধ্যায় নতুন মন্দিরে রামলালা বিরাজমান হয়েছেন। এনিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচুর আবেগ। আমরা তাই ঠিক করেছি রাম এবং রামরাজত্বের স্বপ্নের কথা নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছব।'
অযোধ্যাতে অন্য বছরের তুলনায় উৎসব আরও বড়ো আকারের হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলায় প্রতিটি ব্লকে উৎসব হবে। গ্রামে গ্রামে শোভাযাত্রা হবে। যে সব জায়গায় বড়ো শোভাযাত্রা হয়, সেগুলিও হবে।'
পরিষদের পাশাপাশি রাজ্যে রামনবমীতে শোভাযাত্রা নিয়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রামনবমীর দু'দিন আগে রাজ্যের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে ভোট রয়েছে। সেসময় শোভাযাত্রার অনুমতি মিলবে কি না? আর যদি তা মিলে তা কিন্তু ভোটের বাজারে গেরুয়া বাহিনীর পক্ষেই কাজ করবে, তা নিশ্চিত।
অতীতে রামনবমী ঘিরে শোভাযাত্রায় আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে, তা এবার হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ওই সময় রাজ্য জুড়েই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এনিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘লোকসভা ভোটের সঙ্গে তো ভগবান রামের কোনও সংঘাত নেই। রাম রামের মতো হাঁটবেন আর মানুষ হইহই করে ভোট দেবেন। রামকে নিয়ে রাজনীতি বিজেপি কোনও দিন করেনি। তিনি ভারতীয় শাশ্বত জীবনের পরিচয়। তাঁর আত্মমর্যাদা আর বহমানতা নিয়েই আমাদের কাজ। তাঁকে নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করা নয়।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.