কয়েকদিন আগে দ্য ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের (The University of Hong Kong) করা একটি গবেষণা থেকেই এই তথ্য সামনে এসেছে। যারা নিয়মিত রাত জেগে কাজ করে তাদের অফিসে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না।একে তো ঘুমে ঘাটতি আছে তায় আবার রাতের পর রাত শরীরের বিরুদ্ধে গিয়ে জেগে থাকা, দুইয়ে মিলে শরীরে। একদিকে যেমন দুর্বলতা আসে, তেমনি ডিএনএ-র গঠনেও আসে পরিবর্তন। আর এর থেকেই ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, স্নায়ুর রোগ সহ শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
“অ্যানাস্থেশিয়া অ্যাকাডেমিক জার্নাল'-এ এই বিষয়ে একটি মনোজ্ঞ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যারা রাতের পর রাত নাইট শিফটে কাজ করে, তাদের ডিএনএ-র ক্ষতি পোষাতে জিন এক্সপ্রেশনের মাত্রা কমে যায়। আর সেটা যদি মাসের পর মাস চলে মানে রাত্রে প্রায় ঘুমোচ্ছেনই না, তাহলে সেই মাত্রা ক্রমশ কমতে।থাকে। নাইট শিফটে কাজ করার সময়ে ডিএনএ-র ক্ষয়পূরণের মাত্রা যে ব্যাপক-ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই বিষয়ে চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী কারও মধ্যেই কোনও দ্বিমতের অবকাশ নেই।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে।চিকিৎসকরা দেখেছেন যে যারা সারারাত ধরে অফিস করে তাদের ডিএনএ ভেঙে যাওয়ার হার যারা সাধারণ শিফটে অফিস করে তাদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর পাশাপাশি যদি মাসের পর মাস রাত্রে ঠিকমতো ঘুম না হয়, তাহলে এই ঝুঁকির মাত্রা আরও ২৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়ে যেতে
পারে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের সহকারী গবেষক এস ডব্লিউ চই-এর মতামত এই বিষয়ে প্রনিধানযোগ্য। তিনি জানান, ‘ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বলতে বোঝায় এর স্বাভাবিক গঠনে বেশ কিছু পরিবর্তন আসা এবং এই পরিবর্তন এতটাই জটিল ও মারাত্মক যা ডিএনএ পুনর্গঠিত হওয়ার সময় মেরামত হয় না।' এই গবেষণা থেকে নির্দিষ্ট ফলাফলে আসার জন্য গবেষকরা বেশ কিছু চিকিৎসককে পর্যবেক্ষণ করেন। এটা বেশ অভিনব, মেডিক্যাল সমীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তাঁরা নাইট শিফটে কাজ করেন। প্রথম তিনদিন তাঁদের প্রত্যেককে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে বলা হয়। এরপরে তাঁদের ব্লাড স্যাম্পেল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে যেসব চিকিৎসক নাইট শিফটে কাজ করেন তাঁদের নাইট শিফট শেষে ঘুমের ঘাটতি থাকা অবস্থায় আবারও রক্তপরীক্ষা করানো হয়। এর ফলে গবেষকদের কাছে একটা মারাত্মক তথ্য আসে।
গবেষক চাইয়ের ভাষায়, “আমাদের গবেষণা থেকে আমরা স্পষ্টতই প্রমাণ পেয়েছি যে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ার সঙ্গে ডিএনএ-র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে ডিএনএ-এর ক্ষতিপূরণের পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আরও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.