রাম নামেই ৪০০ পারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে গেরুয়া শিবির। আর বিজেপির এই মাস্টার স্ট্রোকেই কুপোকাত
বিরোধীরা। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা না হলেও দু'দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে বিজেপি (BJP)। আবার নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক প্রতিটি আগাম জনমত সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, রামনামের বিপুল প্রভাবে এবার তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদ জয়ের পথে নরেন্দ্র মোদি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, রামমন্দির উদ্বোধন এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ‘এক্সট্রা মাইলেজ’ দিতে চলেছে। আর তাহলে, এবারের ভোটে রেকর্ড আসনের সঙ্গে ক্ষমতার মসনদে বসার হ্যাটট্রিক গড়ে ইতিহাস তৈরি করতে চলেছেন মোদি। এবিষয়ে তিনি কতটা মরিয়া, তা রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর নিজেই স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'শ্রীরাম শুধু আমাদের নয়, সকলের। শতাব্দীর অপেক্ষার পর এই মুহূর্তটি এসেছে। এখানেই আমরা থামব না।'
ভাবাবেগ এবং হিন্দুত্ব এই দুই ইস্যুকে সামনে এনে বিজেপি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসন পার করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে, তা নরেন্দ্র মোদির কথায় স্পষ্ট।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে বিজেপি যে রাজনৈতিক ৯ এজেন্ডা তৈরি করেছে, তার সমাধান খুঁজে বের করা বিরোধীদের পক্ষে খুব সহজ নয়।
কংগ্রেস এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির রামমন্দির উদ্বোধনে অংশ না নেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ব বিরোধী তকমা সেঁটে দিতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। মোদি শ্রীরামকে জাতির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিজেপির দুর্বলতা কাটাতেও ভগবান রামের স্মরণ নিতে দেখা গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তাই রামমন্দির উদ্বোধনের আগে, মোদি দক্ষিণ ভারতের সেইমন্দির গুলিও দর্শন করেছিলেন যেখানে রামের নাম কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত রয়েছে। ফলত,আসন্ন লোকসভা ভোটে বিরোধীরা মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের মতো ইস্যু তুললেও রামমন্দির ও জাতীয়তাবাদের সামনে হয়তো তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না।
সম্প্রতি দুই বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের করা জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ৫৩ শতাংশ ভোটার বলেছেন, রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা বিজেপিকে ইতিবাচক ফল এনে দেবে। ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, মোটামুটি ফায়দা হবে গেরুয়া শিবিরের। ১২ শতাংশ মনে করছেন, কোনও লাভ হবে না বিজেপির। মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ মনে করছে, এতে বিজেপির ক্ষতি হবে।
রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও কংগ্রেস নেতাদের অংশ না নেওয়া কি বড়সড় ক্ষতি? ওই দুই বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমের ওপিনিয়ন পোল অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা উৎসবে না যাওয়া কংগ্রেসের ভুল ছিল। এতে লোকসভায় তাদের ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ১১ শতাংশ মনে করছেন, কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এই সমীক্ষায় লোকসভার ৫৪৩ টি আসনের জন্য ১,৬৭,৮৪৩
জনের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে অংশ নেন ৮৭ হাজার পুরুষ এবং ৫৪ হাজার মহিলা। এই সমীক্ষা দেশজুড়ে চলেছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ এনিয়ে বলেন, ‘শ্রীরাম জন্মভূমি আন্দোলনের পুরোভাগে লালকৃষ্ণ আদবানি থেকেছেন, বিজেপির সব স্তরের নেতারা থেকেছেন, সেটা এতদিনে অর্জন করা গেছে।আমরা সেই আন্দোলন কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করিনি যে মন্দির প্রতিষ্ঠার আবেগ ছিল মানুষের মধ্যে, আমরাও কোটি কোটি মানুষের সেই আবেগকে পূর্ণ মর্যাদা দিতে এবং ভারতের অস্মিতাকে মর্যাদা দিতে এটা করেছি। এখন এ থেকে যদি আমাদের রাজনৈতিক সুবিধা হয়, হতেই পারে, তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই। কংগ্রেস এখন এসব করছে, রাহুল গান্ধী পৈতে ধারণ করে মন্দিরে চলে যাচ্ছেন, পূজো দিচ্ছেন, অন্যান্য নেতাও নানা পূজো-অর্চনার আয়োজন করছেন। তবে খুব দেরি করে ফেলেছেন ওঁরা। এখন এসব করে হিন্দু ভোট নিয়ে আর কিছুই করতে পারবেন না।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.