ভারতের একটি প্রাদেশিক সরকারি প্রকল্পের এই সাইকেল বাংলাদেশে বিক্রির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর এ নিয়ে বড়ো দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
ভোটের বাজারে শিক্ষা থেকে শুরু করে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে যখন এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই বিজেপির এই অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের খুলনার একটি বাজারে ‘সবুজ সাথি’ (Sabuj Sathi) প্রকল্পের লোগোর সঙ্গে “বিশ্ববাংলা'-র স্টিকার লাগানো নীল-সাদা সাইকেল বিক্রি হচ্ছে।
গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশের সংবাদপত্র “দৈনিক আমাদের সময়"- র শেষ পৃষ্ঠায় ‘সবুজ সাথি' সাইকেলের ছবি দেওয়া প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে এর মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।
বিষয়টি সত্যি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ‘বাংলা ট্রিবিউনে'র খুলনা জেলার প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন জানান খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর বাজারে সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাট বসে। সেই হাটে পশ্চিম-বঙ্গের সবুজ সাথি প্রকল্পের সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। এগুলি এখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই সাইকেলগুলির সামনে লাগানো বাস্কেটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবুজ সাথির লোগো সাঁটা রয়েছে।এগুলি বিক্রি করছেন খুলনা জেলার নোয়াপাড়ার পায়রা এলাকার এক বাসিন্দা। তাঁর নাম রানা । তাঁর বাবাও একই ব্যবসা করেন। আমি সাইকেল কিনব বললে রানা আমায় বলেন, সাইকেলগুলি শতভাগ ভারতীয়। তাঁরা সরাসরি বর্ডার থেকে এগুলো নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, তার আশ্বাস, সাইকেল আটক করলে তার সব ডকুমেন্টও দেওয়া যাবে, টাকা দিলে বাড়িতেও সাইকেল পৌছে দেওয়া যাবে।'
কী ভাবে, কার হাত দিয়ে এই সাইকেল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে তা নিয়ে প্রশ্ন করলেও কোনও উত্তর মেলেনি বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন। তিনি বলেন,ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুকান্ত কুমার সাহার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেব।'
এ দেশে বিষয়টি নিয়ে বড়ো দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক বিমল-শঙ্কর নন্দ। তিনি বলেন, ‘কয়লা, গোরু, মানুষের পর এবার সাইকেল পাচার। সবুজ সাথি একটি সরকারি প্রকল্প। সেই সাইকেলও পাচার হয়ে গেল! তার মানে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে চোরাপথে বাংলাদেশে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর আগে খবর বের হয়েছিল, সাইকেলগুলি খারাপ। পড়ুয়াদের দেওয়ার পর তা মেরামত করাতে।অভিভাবকদের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আবার এই প্রকল্পের সাইকেল ডাঁই করে ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে, সেই ছবিও দেখেছি। এই সাইকেলের
দাম কত? তৈরি করতে কত খরচ হয়? এই প্রশ্ন গুলির যদি উত্তর খোঁজা হয়, তাহলে একটা পাহাড় প্রমাণ কেলেঙ্কারির হদিশ মিলতে পারে। এর জন্য টেন্ডার ঠিকমতো দেওয়া হয় কি?
এই সাইকেল কোম্পানি যদি বাংলার কোনও প্রতিষ্ঠিত সংস্থা হত, তাহলে তো কয়েক হাজার লোক চাকরি পেত। সাইকেল পাচারের তদন্ত।করলে মিলতে পারে বড়ো দুর্নীতির ইঙ্গিত। সেটা খুঁজে বের করা দরকার। এরা বাংলাদেশ থেকে জয় বাংলা, খেলা হবে স্লোগান ধার করেছিল। ভোটের সময় দেখলাম, বাংলাদেশের সিনেমার নায়ককে এনে ভোট প্রচার করাচ্ছে! এটা কি পশ্চিমবাংলা, না পশ্চিম বাংলাদেশ? শাহজাহানও নাকি বাংলাদেশি ! সব মিলিয়ে অদ্ভুত একটা প্রেম দেখা দিচ্ছে। এ নিয়ে ভাবতে হবে।”
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এবারের দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর প্রশ্ন, 'মুখ্যমন্ত্রী কি এটা জানেন না, তিনি কি জানতে পারছেন না যে, ওঁর লোকেরা কী করছে? সরকারি প্রকল্পের সাইকেল অন্য দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা যখন এত বড়ো আকারে
জানা গিয়েছে, তা নিয়ে সাড়া পড়বেই। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
শিক্ষাবিদ নিশীথ কুমার দাসের দাবি, ‘পড়ুয়াদের জন্য সবুজ সাথির সাইকেল চালু করা হলেও এর উদ্দেশ্য আসলে ছিল বহুমুখি। আমরা যদি খোঁজ নিই, তাহলে দেখতে পাব সবুজ সাথির সাইকেলের প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারীরা সিবিআই (CBI) রেডারে আগে থেকেই ছিল। সেক্ষেত্রে সন্দেহ দানা বাঁধে সবুজ সাথি সাইকেলের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে, সেই হিসাবে নিশ্চয়ই অনেক গরমিল রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার বেনিয়ম হয়েছে।
বাংলাদেশে চোরাপথে ঢুকে এই সাইকেল নিশ্চয়ই সেখানে কালো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যারা এই সাইকেল তৈরি ও বিক্রি করল তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত জরুরি।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.