দেশে ধর্মান্তরণ বন্ধ না-হলে অচিরেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে! এমনই কড়া মন্তব্য করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট (Allahabad High Court)।
আদালত এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, ধর্মীয় সমাবেশে ধর্মান্তরণের ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে।
গত সোমবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল উত্তরপ্রদেশ প্রহিবিশন অব আনল' ফুল কনভার্সন অব রিলিজিয়ন অ্যাক্ট, ২০২১-এর অধীনে অভিযুক্ত কৈলাসের জামিনের আবেদন খারিজ করার সময় এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন।
কৈলাসের বিরুদ্ধে স্থানীয় হিন্দুদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ আনা হয়। কৈলাস দিল্লিতে একটি ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করেছিল, যেখানে সমাজের পিছিয়ে-পড়া অংশ থেকে আসা ব্যক্তিদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। যদিও অভিযুক্ত কৈলাসের দাবি ছিল যে, উপস্থিত থাকা হিন্দুরা স্বেচ্ছায় খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।
রামকালী প্রজাপতি নামে এক ব্যক্তি এফআইআর (FIR) দায়ের করেছিলেন যে, কৈলাস তাঁর মানসিক ভাবে অসুস্থ ভাইকে এক সপ্তাহের জন্য দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা করিয়ে তাঁর ভাইকে গ্রামে ফিরিয়ে আনবেন বলেও রামকালী প্রজাপতিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন কৈলাস। কিন্তু এরপর আর তিনি ফিরে আসেননি। পরে কৈলাস একা গ্রামে ফিরে আসেন এবং দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে অনেক লোককে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।
রামকালী প্রজাপতির মতে, তাঁর ভাইকে ধর্মান্তরিত করার জন্য অর্থ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলে যে, সংবিধান ধর্ম প্রচারের অনুমতি দেয়, কিন্তু ধর্মান্তরের অনুমতি দেয় না।
এদিন এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলে, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ২৫ যে কোনও নাগরিককে ধর্ম পালন, উপাসনা এবং তাঁর ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা দেয়। তবে ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা কাউকে ধর্মান্তরিত করার অনুমতি দেয় না। এর পরই আদালত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে, এটি দেখা গিয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিরীহ দরিদ্র লোকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এবং খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এই অবস্থায় ধর্মান্তকরণের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে আবেদনকারীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিচারপতি রোহিতরঞ্জন আগরওয়াল বলেন, ‘যদি এই প্রক্রিয়াটি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা একদিন সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। এই ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত, যেখানে ধর্মান্তকরণ হচ্ছে এবং ভারতের নাগরিকের ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবিধানের ২৫ তম অনুচ্ছেদে বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মের স্বাধীনপেশা, অনুশীলন এবং প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তবে এটি একটি বিশ্বাস থেকে অন্য বিশ্বাসে রূপান্তর করার ব্যবস্থা করে না। ‘প্রচার’ শব্দের অর্থ প্রচার করা, কিন্তু এটি কোনও ব্যক্তিকে তার ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে রূপান্তরিত করার অর্থে নয়।'
এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, যেখানে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সব রকম সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের প্রতারিত করা হয়েছিল এবং খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে প্ররোচিত করা হয়েছিল। এই আদালত প্রাথমিকভাবে দেখেছে যে, আবেদনকারী জামিনের অধিকারী নন। সুতরাং উপরোক্ত মামলার অপরাধে জড়িত আবেদনকারীর জামিনের আবেদন, এতদ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.