বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক রাতেই কেন হয়, জানুন তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ কী! - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক রাতেই কেন হয়, জানুন তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ কী!

Why does a heart attack happen at night? Here’s all you need to know

দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে রাতে  যখন শরীর বিশ্রাম পাচ্ছে। আসল কথা হল মানুষ যখন ঘুমোয়, তখন শরীরের বিশ্রাম কিন্তু হয় না, সে অনবরত তার মেরামতির কাজগুলি করেই যায়। বিশেষ করে কারোর যদি ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হাইপারটেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো কোমরবিড ইলনেস থাকে। 


ঘুমের সময় রক্তে কিছু রাসায়নিকের পরিবর্তন হয়, যা হার্টের জন্য মোটেই ভালো নয়। রাতে মোটামুটি মধ্যরাত্রি পার করার পরে হার্ট অ্যাটাক হয়, বিশেষ করে চারটে সাড়ে চারটে নাগাদ। এটা সেই সময় যখন রক্তের একটি বিশেষ প্রোটিন পিএওয়ান-এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই প্রোটিনটি রক্তকে ঘন করতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তের প্লেটলেটগুলি আঠালো হয়ে পড়ে, একে অপরের সঙ্গে মিশে ক্লট তৈরি করে, এই ক্লট হার্টের ধমনিতেও তৈরি হয়, ফলে রক্ত চলাচলের পথে বাধা পেয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়।


অধিকাংশ সময়েই আমরা আমাদের শরীরের‌ ভিতরে যে সমস্যা আছে, সেগুলিকে এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো রোগ। এই রোগে শ্বাসনালী ঘুমের সময়ে আটকে যায়, ফলে যে শ্বাসগ্রহণ করা হয় তা ফুসফুসে পৌঁছতে দেরি হয়। শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যায়।আর সবটাই হয় ঘুমের মধ্যে। শ্বাসনালীতে আগে থেকে ফ্যাট থাকলে কিংবা থাইরয়েডের মতো অসুখ‌ থাকলে সেখান থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা হতে‌ পারে। এর ফলে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত নাকডাকার সমস্যা হয়, কিংবা খানিকক্ষণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস‌ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন‌ পায় না। মস্তিষ্কে‌ অক্সিজেনের জোগান হয় না। ঘুমের মধ্যে ১০ সেকেন্ড বা তার খানিক বেশি সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ থাকে। এর ফলে হার্টের উপরে স্ট্রেস পড়ে। রাতে সাধারণভাবে যেখানে রক্তচাপ কম‌ থাকার কথা, এই পরিস্থিতিতে তা বেড়ে গিয়ে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ও অ্যাড্রিনালিনের বেশি নিঃসরণ করে। এর ফলে হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে,‌ কেননা হার্ট রক্তচাপকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে।


গবেষকরা দেখেছেন স্লিপ অ্যাপনিয়ার ফলে হার্টে প্রদাহ বাড়ে, হার্টের ধমনির দেওয়ালে পরিবর্তন হয় এবং হার্টের ছন্দে বিঘ্ন ঘটে। এগুলি সবই একত্রে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী এবং এর থেকে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ পর্যন্ত হতে পারে।


অনেক রোগীর বিরল হার্টের গতি থাকে, তাকে বলা হয় সিক সাইনাস সিনড্রোম। এটি হার্টের স্বাভাবিক পেসমেকারের যে কাজটি, তাতে বাধা দেয়। একে বলে সাইনাস নোড। সাইনাস নোডই হার্টবিটকে নিয়ন্ত্রণ করে।সিক সাইনাস সিনড্রোমের ফলে ধীরগতির হার্টবিট, দুটি হার্টবিটের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ গ্যাপ, অনিয়মিত হার্টবিট (অ্যারিথমিয়া) ইত্যাদি সমস্যা হয়। এর ফলে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটিতে বাধা আসে। 


গবেষকরা দেখেছেন স্নায়ুতন্ত্রে অবস্থিত একটি রাসায়নিক এর ফলে সুস্থ মানুষদের মধ্যে হার্টরেট কমে যায়। কিন্তু সিক সাইনাস সিনড্রোমের রোগীদের এর থেকে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে যার ফলাফল মৃত্যু। 


রাতে হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হল ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা। যা হাইপারটেনশনের সঙ্গে সংযুক্ত। এর ফলে হার্টের উপরে চাপ পড়ে ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে ইনসোমনিয়ার রোগীদের ১.৬৯ গুণ বেশি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর থেকে মুক্তিলাভের উপায় হল ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর আছে, সেগুলিকে কমাতে হবে, যেমন হার্টবিটের সমস্যা, অনিদ্রার সমস্যা। সঙ্গে সুষম আহার, এক্সারসাইজ করা, ধূমপান,অ্যালকোহল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাত্রে যাতে ভালো ঘুম হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ঘুমোনোর আগে খানিকটা জল খাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad