বাংলাদেশের মুজিবনগরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যে ভাস্কর্যটি পাকিস্তানি বাহিনীর আত্ম-সমর্পণের দৃশ্য ধারণ করেছিল, সেটি ভাঙার ঘটনাটি দেশটির ইতিহাসে এক গর্বিত অধ্যায়ের প্রতি আঘাত।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ কি জামাতে ইসলামির মতো দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে, যারা এক সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল? যদি তা না হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতার স্মারক এই ভাস্কর্যটি কেন ধ্বংস করা হলো? খুলনার মুজিবনগরে অবস্থিত শহিদ মেমোরিয়াল চত্বরে পাকিস্তান এর আত্মসমর্পণের মুহূর্তের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিল।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে চলমান ছাত্র আন্দোলন এবং তার ফলে সৃষ্ট নৈরাজ্যের মধ্যে এই ভাস্কর্যটি ধ্বংস করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গর্বের মুহূর্তের স্মারক। তাই প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রদের আন্দোলনের আড়ালে কি জামাতে ইসলামি বা পাকিস্তান-পন্থীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে? কারণ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মারক ভাস্কর্যকে ধ্বংস করার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকার সম্ভাবনা কম।
সোমবার কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাস্কর্য ভাঙার ছবি শেয়ার করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই কাজ করেছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ভারত-বিরোধী দাঙ্গাবাজদের হাতে মুজিবনগরের শহিদ মেমোরিয়াল চত্বরে ১৯৭১ সালের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হওয়ার ঘটনা বেদনাদায়ক। যদিও কিছু স্থানে মুসলিম অসামরিক ব্যক্তিরা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের রক্ষার চেষ্টা করছে, তবে অনেক জায়গায় ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মন্দির এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুজিবনগরের এই ভাস্কর্যটি ভাঙার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। মহম্মদ ইউনুস ও তার অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সংকটময় সময়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে ভারত রয়েছে, তবে এই ধরনের নৈরাজ্যকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল। পাকিস্তানের মেজর-জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি ৯৩,০০০ সৈন্যসহ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা। মুজিবনগরের শহিদ মেমোরিয়াল চত্বরে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে ধরে রাখার জন্য ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছিল, যা এখন আর নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.