শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হল ত্বক। ত্বককে সারাদিন ধরে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়—বাইরের ধুলোবালি, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, পরিবেশ দূষণের প্রভাব। ত্বকে কোনও সংক্রমণ হলে সেখান থেকেও নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যদি না ঠিকঠাকমতো যত্ন নেওয়া হয়। ত্বক নিজে অবশ্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে জীবাণুকে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না দিয়ে। এমনকী ডিহাইড্রেশন কমানোর ক্ষেত্রেও ত্বকের ভূমিকা আছে। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরের রক্তবাহী ধমনিকে পরিষ্কার রাখে।
ত্বকের স্বাস্থ্য কীরকম থাকবে, তা একাধিক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে, যেমন হরমোনাল পরিবর্তন ও হরমোনের ভারসাম্যের অভাব, ক্রনিক প্রদাহ কিংবা অটোইমিউন কন্ডিশন, বয়স বাড়া, অতিরিক্ত স্ট্রেস, এক্সারসাইজ বেশি পরিমাণে না করা, শরীরে জলশূন্যতা ও ডায়েট। ত্বককে ভালো রাখার জন্য বেশ কিছু খাবার আছে যার উপর নির্ভর করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভেগান ডায়েট ত্বককে নানারকম সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে। সেরকমই কয়েকটি খাবারের সন্ধান দেওয়া হল।
ভোগান খাবার কি?
ভোগান খাবার হল এমন একধরনের খাবার যা দেবতা বা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। এই খাবার সাধারণত পূজার সময় বা বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রস্তুত করা হয় এবং দেবতার কাছে নিবেদন করার পরে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ভোগান খাবার সাধারণত নিরামিষ হয় এবং এতে পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার করা হয় না। নিবেদন করার পরে এই খাবারকে "প্রসাদ" বলা হয়।
ত্বকের স্বাস্থ্যর জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডপূর্ণ খাবার
চিয়া ও ফ্ল্যাক্সসিডস, আখরোট, সবুজ পত্রল সবজি, ভেজিটেবল তেল, স্প্রাউটস এর মধ্যে পড়ে। কোষের আবরণীর জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই কার্যকর একটি উপাদান। এটি স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে ও কোষের কাজ ঠিকমতো করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতার পরিমাণ বজায় রাখে এবং একে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এটি শরীরের প্রদাহের সমস্যা কমায়, যার ফলে ত্বকে একজিমা, সোরিয়াসিস, অ্যাকনে হতে পারে না। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ফলে ত্বক যে ড্যামেজ হয় তার হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এই খাবারগুলি। স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ত্বক পেতে আজই শুরু করুন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ খাবার খাওয়া।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পূর্ণ খাবার
এর মধ্যে আছে বেরি গোত্রের ফল, অন্যান্য ফল ও বিবিধ সবজি। সূর্যের রশ্মি ও পরিবেশ দূষণের ফলে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার। এটি ত্বককে ফ্রি র্যাডিক্যালসের হাত থেকে বাঁচায়, যেগুলি ত্বকের উপর জমতে থাকলে কোষ ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এগুলি বেশি থাকলে অকালেই ত্বকে বলিরেখা পড়ে এবং মানুষ বুড়িয়ে যায়। সেলেনিয়াম একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিনারেলস, যা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে যে ক্ষতি ত্বকের হয়, তার থেকে রক্ষা করে সেলেনিয়াম।
ত্বকের উন্নতির জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
এই খাবারের তালিকায় আছে হ্যাজেলনাটের মধ্যে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই। কোলাজেন তৈরিতে ভিটামিন ই-এর একটা ভূমিকা আছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি ও পরিবেশের নানা দূষণ থেকে বাঁচায়।
ভিটামিন এ ও কার্বোনেটেড যুক্ত খাবার
এর মধ্যে আছে গাজর, স্কোয়াশ, সবুজ পত্রল সবজি, মিষ্টিআলু, কুমড়ো, লাল ক্যাপসিকাম, অ্যাপ্রিকট, আম, টমেটো, পিচ। ত্বকের কোষের টার্নওভার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে করে ভিটামিন এ, ফলে অকালেই ত্বক বুড়িয়ে যায় না। এটি একদিকে যেমন কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, তেমনি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ত্বকে কোনও ক্ষত হলে তা সারাতে সাহায্য করে ভিটামিন এ। ডার্কস্পট, পিগমেন্টেশন, অ্যাকনে কমাতে সাহায্য করে এই অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিনটি। ক্যারোটিনয়েড খাবারগুলি শরীরে ঢুকে রেটিনলে বদলে যায় (সক্রিয় ভিটামিন এ) ও ত্বকের কোষের উপর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
উদ্ভিজ্জ প্রোটিনযুক্ত খাবার
হোল গ্রেনস, বাদাম, বীজ, সবুজ পত্রল সবজি এর অন্তর্গত। ত্বকের টিস্যুর নানারকম ক্ষতি ঠিক করে, টিস্যুর কার্যকলাপ ঠিকমতো করার জন্য এই খাবারগুলির দরকার আছে। এছাড়া কোলাজেন তৈরিতে ও ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে এর ভূমিকা আছে।
ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সিলিকাসমৃদ্ধ খাবার
কলা, ওটস, কিশমিশ, গম, ব্রাউন রাইস এর মধ্যে পড়ে। এটি একদিকে যেমন কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, অন্যদিকে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। সিলিকা ত্বকের মধ্যে জলীয় অণুকে একত্রে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিস্যুতে সিলিকার পরিমাণ কমতে থাকে, তাই তখন ডায়েটের মাধ্যমে শরীরে সিলিকার চাহিদা পূরণ করতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.