পেঁচা-পেঁচির ব্রতকথা। ভাদ্র মাসের লক্ষ্মীপূজা ব্রত। - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

পেঁচা-পেঁচির ব্রতকথা। ভাদ্র মাসের লক্ষ্মীপূজা ব্রত।

Peche-pechi vrat khata, lakshmi puja brata


পেঁচা-পেঁচী ব্ৰত ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার পালিত হয় সকালে। বলা হয়ে থাকে কোন নারী ভাদ্র মাসে এই লক্ষ্মী পূজো পালন করলে তার ঘরে সর্বদা মা লক্ষ্মী বিরাজ করেন। তবে জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনীটি।


এক দেশে এক বিধবা বামনী বাস করতেন, তার একটি ছোট সন্তান ছিল। তারা ছিল খুব গরিব। কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা পেত তাই দিয়েই তাদের কোনরকম চলে যেত। তাদের কুঁড়ে ঘরের সামনে ছিল একটা বটগাছ, বামনির ছেলে সেই গাছের নিচে খেলা করত। 


এক দুপুরে উঠোনে খেলা করছিল ছেলেটা। এমন সময় সেখান দিয়ে এক ক্ষীরওয়ালা‌ যাচ্ছিলেন। তাই দেখে সে মায়ের কাছে পয়সা চাইল, কিন্তু বামুনি কেঁদে বললেন তারা যে গরিব কোথায় পয়সা পাবে! তা শুনে ছেলেটিও কাঁদতে থাকল। তাই দেখে ক্ষীরওয়ালা ছেলেটিকে এমনিই এক ভাঁড় ক্ষীর দিয়ে দিল। ক্ষীর পেয়ে মনের আনন্দে সে গাছ তলায় গিয়ে বসল। সেই গাছে‌ থাকত পেঁচা পেঁচির দুটি ছানা। ক্ষীর দেখে তারাও চেঁচামেচি করতে লাগল ক্ষীর খাবার জন্য।


           ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

বামুনির ছেলে গাছে উঠে তাদের নিচে নামিয়ে পেট ভরে ক্ষীর খাওয়াল, তারপর তাদের বাসায় তুলে ঘুম পাড়িয়ে দিল। পেঁচা পেঁচী বাসায় ফিরে দেখে তাদের ছানারা আরামে ঘুমিয়ে আছে। তাদের ডেকে খাওয়াতে গেলে তারা বলে, “ওই গরিব বামুনের ছেলেটা আমাদের ক্ষীর খাইয়েছে। বামুনের জিনিস খেয়ে থাকতে নাই, তুমি ওদের অবস্থা ফিরিয়ে দাও।” তা শুনে পেঁচি হেসে বলে, “আমি মা লক্ষ্মীর কাছে ওদের দুঃখের কথা জানাবো।”

Bhadra maser lakshmi puja brata

এই ভাবে প্রতিদিন পেঁচা পেঁচী তার বাচ্ছাদের রেখে যায় আর বাসায় ফিরে দেখে বাচ্চারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে। ছানারা তার মা বাবার কাছে গরিব বামুনের দুঃখের কথা রোজ রোজ বলে আর পেঁচা‌ পেঁচীর দুঃখে মন ভরে যায়।


একদিন বামনী ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবারে অনেক কষ্ট করেও লক্ষ্মী পুজো করছিলেন। তার ছেলে প্রাসাদ এনে পেঁচা পেঁচীর ছানাদের খাওয়াল। তারপর যখন পেঁচা পেঁচি বাসায় ফিরল, তখন ছানারা তাদের বলল, “আমরা আর তোমাদের কাছে খাবো না, ওই ছেলেটা যেখান থেকে যা পায় তা থেকে আমাদের খাইযে যায়, তোমরা কেন ওদের দুঃখ কষ্ট দূর করে দিচ্ছ না?” পেঁচা পেঁচী তার ছানাদের বলল, “আজ ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার, বামনী লক্ষ্মী পুজো করছে। মা লক্ষ্মী ওদের দুঃখ ঠিক দূর করে দেবে।”


সকালে ছেলেটা যখন গাছের নিচে বসেছিল, পেঁচা এসে তাকে বলল, ” শোন ছেলে! তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। তুমি‌ যাবে?” ছেলেটা মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ। পেঁচা পেঁচী তাকে বলল, “তুমি‌ ওই ডালটার উপর গিয়ে বসো। আমরা দু দিক দিয়ে ধরে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবো। যেখানে নামাবো সেখানে যদি কেউ তোমাকে সোনাদানা ধন দৌলত দিতে চায় তুমি তা নেবে না। শুধু‌ তাদের বলবে তিল ধুবড়ি দিতে। কথামতো পেঁচা পেঁচী ছেলেটাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিল স্বয়ং মা লক্ষ্মীর বাগানে। ছেলেটা সেখানে মা লক্ষ্মীকে দেখতে‌ পেয়ে প্রনাম করল। ছেলেটিকে দেখে মা লক্ষ্মীর খুব দয়া হল। মা জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?”‌ ছেলেটি বলল, “মা আমরা খুব গরিব। আপনার কাছে তিলধুবড়ি নিতে এসেছি।” মা তাকে অনেক সোনাদানা, ধন সম্পদ দেখালেন, কিন্তু তার মধ্যে রাখা তিলধুবড়িটাই সে নিতে চাইল। মা বললেন, ” তুমি এটা নাও কিন্তু‌ রোজ ভক্তি ভরে এটাকে পূজো করবে তাহলে তোমাদের আর কোনো দুঃখ অভাব থাকবে না।” 


এরপর পেঁচা পেঁচী আবার তাকে কুঁড়ে ঘরের সামনে নামিয়ে দিল। সে তার মাকে সব কথা খুলে বলল। বামনী ঘর পরিষ্কার করে একটা পিড়ি পেতে তাতে আল্পনা দিয়ে ঘটের উপর তিলধুবড়ি রেখে‌ পূজো করলেন। তারপর থেকে প্রতিদিন ভক্তি ভরে পূজো করতে থাকলেন। দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে গেল, মা লক্ষ্মীর দয়ায় তাদের প্রচুর ধনসম্পদ হল।


তাদের হঠাৎ এত প্রতিপত্তি দেখে পাড়ার লোকেরা খুব আশ্চর্য হল। এমনকি রাজার কানেও তাদের কথা পৌঁছে গেল। তারা হঠাৎ করে কিভাবে এত ধনী হল জানবার জন্য পাড়ার লোকে উৎসুক‌ হয়ে পড়ল। তারপর তারা বামুনির তিল ধুবড়ি পূজোর কথা‌ জানতে পারল। রাজা সেটা জানতে পেরে ভাবল যখন তাদের এত সম্পত্তির বহর বাড়ছে, তখন কোনদিন রাজার রাজত্বও কেড়ে নিতে পারে। এই ভেবে বামুনির ঘর লুট করে তিল ধুবড়ি নিয়ে চলে গেল। আসলে মা লক্ষ্মীর ছলনাতেই এটা হল। 


মা লক্ষ্মীর জিনিস মা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই ফিরে গেল। আর বামুনি আর তার‌ ছেলে তাদের আগের অবস্থাতেই ফিরে গেল।



এই দেখে পেঁচা পেঁচীর ছানারা খুব কষ্ট পেয়ে তাদের মাকে বলল, “ওদের কি দোষ ছিল মা? রাজা তো ভয়ে এসব করল। তুমি আবার মা লক্ষ্মীকে বলে কিছু ব্যবস্থা করে দাও না!” কিন্তু পেঁচী বলল, “এখন তো কিছু করা যাবে না। ওরা তো রাখতে পারল না।” কিন্তু ছানারা মায়ের কথা শুনলোনা আর কাঁদতে থাকল। তখন বাধ্য হয়ে পেঁচী আবার মা লক্ষ্মীর কাছে ছেলেটিকে নিয়ে গেল। মা লক্ষ্মী প্রথমে রাজি না হলেও নারায়ণের কথায় আবার তাদের তিল ধুবড়ি দিয়ে বললেন, “এবারে রাখতে না পারলে কিন্তু আর পাবে না।” ছেলেটা মা লক্ষ্মীকে প্রণাম করে আবার পেঁচীর সাহায্যে বাড়ি ফিরে এল। ফিরে এসে মাকে আবার সব কথা খুলে বলল। 


আগের‌ মতই বামুনি ভক্তিভরে পূজো করতে লাগলেন। দেখতে দেখতে আবার তারা আগের মত ধনী হয়ে উঠল। এই দেখে রাজা আবার ভয় পেল। কিন্তু এবারে বামুনির ঘর লুট না করে বরং বামুনির ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন। তারপর তাদের বিয়ের পরে ছেলেটিও মস্ত বড় রাজা হয়ে গেল। আর পেঁচা পেঁচীর ছানাদেরও রোজ খাবারের বন্দোবস্ত করে দিলেন। 


তারপর একসময় বামুনির যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হল তখন বৈকুণ্ঠ থেকে তার জন্য রথ নেমে এল। বামুনি রথে উঠবার আগে বউমাকে ডেকে ভাদ্র, কাৰ্ত্তিক, পৌষ আর চৈত্র মাসে মা লক্ষ্মীর পূজো করতে বললেন। বামুনি মারা গেলে ছেলে বউ খুব ঘটা করে তার শ্রাদ্ধ করলেন। তারপর তারা ভক্তিভরে মা লক্ষ্মীর পূজো করতে থাকলেন।তাদেরও যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হল, তারা তাদের ছেলে- মেয়েদের লক্ষ্মী পূজোর কথা বলে রথে চেপে বৈকুণ্ঠে চলে গেলেন ধীরে ধীরে পেঁচা পেঁচীর ব্রত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad